Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 10:02 pm

এম এ মান্নান ফ্লাইওভারে‘ফাটল নেই’, তিন সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাটে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ‘ফাটল নেই’ বলে মত দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) গঠিত ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত কমিটি।

দুই সদস্যের ওই কমিটি বৃহস্পতিবার রাতে সিটি করপোরেশনে জমা দেয়া প্রতিবেদনে এই মত দেয়।

তদন্ত কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তিনটি সুপারিশ দিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে বলেছি।’

তদন্তে কী পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওখানে যা দেখা যাচ্ছে তা, কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। ফ্লাইওভারের ওই র‌্যাম্পটি তৈরি করা হয়েছিল হালকা যানবাহনের জন্য। তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছি। সেখানে ভারী যানবাহন যেন না চলে।’

র‌্যাম্পটি যেন কার্যকর থাকে এবং বেশি দিন যেন ব্যবহার করা যায়, সেজন্য নজদারিও করতে বলেছে তদন্ত কমিটি।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক গতকাল বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে কোনো ক্র্যাক বা স্ট্রাকচারাল প্রবলেম নেই। ফাঁকা অংশটি হাই স্ট্রেংথ থিন কনক্রিট দিয়ে সিল করে দিতে বলেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সকে আমরা দ্রুত রিপেয়ার করতে বলে দিয়েছি।’ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফ্লাইওভারের মূল অংশের সঙ্গে র‌্যাম্পের পিলারের জোড়া দেয়া অংশের ‘ফোম’ সরিয়ে যথাযথভাবে পরিষ্কার করে সে অংশটুকু ‘হাই স্ট্রেংথ থিন কংক্রিট’ দিয়ে ‘সিল’ করে দিতে বলা হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘র‌্যাম্পের নিচে এবং সংযোগ অংশে মোট তিনটি হাইট ব্যারিয়ার ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে যাতে ভারী যানবাহন উঠতে না পারে। মেরামত কাজ শেষ হলে র‌্যাম্পটি খুলে দেয়া হবে। তদন্ত কমিটি মাঝেমাঝে ফ্লাইওভারের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো পর্যবেক্ষণে রাখতে বলেছে।’

গত ২৫ অক্টোবর রাতে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল দেখা দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই ওই র‌্যাম্পে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

এম এ মান্নান ফ্লাইওভারটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নির্মাণ করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হস্তান্তরের পর থেকে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।

২৬ অক্টোবর দুপুরে ফ্লাইওভারটি পরিদর্শনে গিয়ে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ফাটল দেখে র‌্যাম্পের নির্মাণ ক্রুটি অথবা নকশাগত ত্রুটি থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

ফ্লাইওভারটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান সেদিন সকালে বলেছিলেন, হালকা গাড়ির জন্য তৈরি র‌্যাম্পে ভারী যানবাহন চলায় ফাটল দেখা দিতে পারে। অবশ্য বিকালে তিনি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, সেখানে কোনো ফাটল হয়নি।

পরদিন ২৭ অক্টোবর নকশাকারী কোম্পানি ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালটেন্ট লিমিটেড এবং ঠিকাদার কোম্পানি ম্যাক্স গ্রুপের বিশেষজ্ঞরাও পরিদর্শন শেষে দাবি করেন, ফ্লাইওভারের পিলারে কোনো ফাটল নেই, যা দেখা যাচ্ছে তা হলো ‘কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট’।হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য নকশা করা ওই র‌্যাম্পে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ঝুঁকির কথা সব সংস্থাই স্বীকার করেছে। তবে সেখানে ‘হাইট ব্যারিয়ার’ না থাকার জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে সিডিএ ও সিটি করপোরেশন।

১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরনগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে বহদ্দারহাট মোড় পর্যন্ত এক দশমিক ৩৩ কিলোমিটার এ ফ্লাইওভারটি ২০১৩ সালের অক্টোবরে উদ্বোধন করা হয়।

প্রায় চার বছর পর স্থানীয়দের দাবিতে বাড়তি ওই র‌্যাম্প যোগ করা হয় ফ্লাইওভারে, তা চালু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে।