এলএনজির দাম ও সদ্ব্যবহারের প্রশ্ন

ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতেই শুধু নয়, আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তায় ভারসাম্য আনতেও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির তাগিদ ছিল বেশ ক’বছর ধরে। সম্প্রতি সরকার এ সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত করেছে বলে খবর রয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, আগামী বছর এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। তবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ যে বাজার থেকে আমদানি করতে যাচ্ছে, সেখানে গ্যাসটির মূল্য চড়া। স্থানীয় বাজারের প্রায় নয়গুণ দামে কিনতে হবে আমদানিকৃত এলএনজি। সেক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম পড়বে ৬২.১৫ টাকা; যেখানে একই পরিমাণ গ্যাসের দাম ৬.৯৬ টাকা (বর্তমানে)। বলার অপেক্ষা রাখে না, এত দামের আমদানিকৃত এলএনজি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে বিদ্যুতের দামও বেড়ে উঠবে আনুপাতিকভাবে। এ অবস্থায় এলএনজির দাম নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে।

এখন কথা হলো, এত বাড়তি দামে এলএনজি আমদানি করা আমাদের উচিত হবে কি না। প্রথমেই বলতে হয়, এলএনজি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হওয়া কমোডিটির একটি। বিশেষত এশিয়ার দেশগুলোয় ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে এর চাহিদা। আগামীতে চাহিদা কমবে, সে লক্ষণও নেই আপাতত। প্রভাবশালী ফোর্বস সাময়িকী বরং বলছে, আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে বিশ্ববাজার থেকে এলএনজি রফতানি হবে ৭০টি দেশে এবং বিদ্যমান চাহিদার চেয়ে এর চাহিদা কমপক্ষে ৭৪ শতাংশ বেড়ে উঠবে তখন। এ আশায় বসে থাকা তাই ঠিক হবে না যে, আগামীতে এলএনজির দাম কমবে। উল্টো বলতে হয়, বাংলাদেশের উচিত ছিল আরও আগে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া। এলএনজির মতো পণ্যের দাম সইয়ে নেওয়ার ব্যাপার রয়েছে ক্রেতাদের। তাছাড়া বাজারে প্রবেশ করা মাত্র এর সঙ্গে জ্বালানির অন্যান্য উৎসÑযেমন কয়লা, তেল প্রভৃতির মূল্য সমন্বয় করতে হবে। এদিকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত না নিয়ে উপায়ও নেই। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে স্থানীয় প্রাকৃতিক উৎসগুলো ফুরিয়ে যাওয়ার পথে। অস্বীকার করা যাবে না, এখনও আমাদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কয়লা মজুত রয়েছে। নিজস্ব সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনাও বিদ্যমান। তা সত্তে¡ও বাস্তবতার নিরিখে এলএনজি ব্যবহার থেকে হাত গুটিয়ে রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না বলেই মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তবে সেই এলএনজির দাম যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তার ওপরও জোর দেব আমরা। হারিকেন হার্ভির প্রভাবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এলএনজির দাম নাকি খানিকটা কমেছে। সমস্যা হলো, সেখান থেকে এ গ্যাস আমদানি বাংলাদেশের পক্ষে লাভজনক হবে না। এক্ষেত্রে স্পষ্টতই পরিবহন ব্যয় পড়বে অত্যধিক বেশি। আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হয় প্রাচ্যের সীমার মধ্য থেকে এলএনজি আমদানি করা গেলে। খেয়াল করা দরকার, এলএনজি বাজার-কাঠামো পরিবর্তন হচ্ছে দ্রæত। সেখান থেকে সুবিধা নিতে হবে বৈকি। এজন্য স্পট মার্কেটে দরকষাকষিতে যাওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি আমরা। পাশাপাশি এলএনজির সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণে যতœবান হতে হবে। জানা যাচ্ছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে এলএনজির মিশ্রণ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন এর সিস্টেম লস যত কমানো যাবে তথা ‘অপটিমাম পোটেনশিয়ালিটি’ যত ব্যবহার করা যাবে, ততই সুপ্রভাব পড়বে বিদ্যুতের দামে। সেজন্য সরবরাহ থেকে ব্যবহার পর্যন্ত এলএনজির উপযুক্ত অবকাঠামো উন্নয়নেও দৃষ্টি দিতে হবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০