Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:34 am

এলএনজির ভর্তুকিতেই গেছে সোয়া ১২ হাজার কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্য ২০১৬ সালে ‘জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল’ গঠন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে প্রতি ঘনমিটারে এক টাকা এক পয়সা জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলে জমা হয়। এতে গত জুন পর্যন্ত তহবিলের আকার দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা।

যদিও মূল উদ্দেশ্য বাদ দিয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে এ তহবিল ব্যবহার করা হচ্ছে। তহবিলের প্রায় পুরোটাই এলএনজি আমদানির ভর্তুকি ব্যবহার করা হয়ে গেছে। সম্প্রতি বিইআরসিতে অনুষ্ঠিত গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ), জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল (ইএসএফ) ও বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন তহবিল (পিএসডিএফ) ব্যবহার নিয়ে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা বৈঠকে এ তথ্য উঠে আসে।

বৈঠকের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত পেট্রোবাংলা প্রান্তে ইএসএফে জমা পড়ে ১২ হাজার ৩৪২ কোটি এক লাখ টাকা। আর কমিশনের সম্মতিক্রমে এলএনজি আমদানি ব্যয় নির্বাহের জন্য তহবিল থেকে ৯ হাজার ২২৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়া এলএনজি-সংক্রান্ত ইনভয়েস পরিশোধের বিষয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইএফএস হতে তিন হাজার কোটি টাকা সংস্থানে সম্মতি নেয়া হয়। অর্থাৎ ইএফএসের ১২ হাজার ২২৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা তথা পুরোটাই ব্যয় হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল শেয়ার বিজকে বলেন, সব পক্ষের অনুমতি নিয়েই এলএনজি আমদানিতে ইএফএসের অর্থ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। সে থেকে এ তহবিলটি এলএনজি আমদানির ভর্তুকিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় দ্রুতই এ তহবিলের পুরোটা ব্যবহার করা হয়েছে। তাই বিকল্প হিসেবে চলতি অর্থবছরের বাজেটে এলএনজি আমদানির ভর্তুকি বাবদ চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, ২০০৯ সালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এক আদেশে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়। ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ তহবিলে জমা পড়েছে প্রায় ১৩ হাজার ৩২০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ তহবিল থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা

হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার তিন হাজার ৪৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এ তহবিল থেকে বাপেক্স, বিজিএফসিএল ও এসজিএফএলের অনুকূলে আরও চার হাজার ৯১০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে।

বর্তমানে এ তহবিলের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪০৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর থেকে সরকারের কোষাগারে তিন হাজার কোটি টাকা জমা দিতে হয়েছে। সুদসহ এ অর্থ ফেরত দেয়ার কথা অর্থ মন্ত্রণালয়ের। তবে তারা এখনও কোনো অর্থ ফেরত দেয়নি। এছাড়া জিডিএফে জমাকৃত অর্থের সম্পূরক শুল্ক/ভ্যাট বাবদ দুই হাজার ৭৪০ কোটি ৩৮ লাখ অর্থ মন্ত্রণালয় এখনও প্রত্যর্পণ (ফেরত) করেনি।

এদিকে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গঠন করা হয় বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন তহবিল। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ তহবিলের আকার দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৪৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরিত হয়েছে ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ তহবিল থেকে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, যার তিনটি গত বছর উৎপাদন শুরু করেছে। আরেকটি কেন্দ্র চলতি মাসেই উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। বর্তমানে এ তহবিলে জমা আছে পাঁচ হাজার ৮১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

বৈঠকে জিডিএফ থেকে নেয়া তিন হাজার কোটি টাকা সুদসহ ফেরত প্রদানে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পিএসডিএফ তদারকির জন্য ‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন তহবিল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটি’ কার্যকর এবং কমিটির প্রতিবেদন ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বিইআরসিতে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা দেয়া হয়।