এলডিসিভুক্ত ৪৬ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ বাংলাদেশের

বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েই চলেছে। গত কয়েক বছরে দ্রæত বেড়েছে এ ঋণের পরিমাণ। এতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতেও দ্রæত বাড়ছে বিদেশি ঋণ। সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই বিদেশি ঋণ নেয়ার প্রবণতা বাড়ায় সুদ ও আসল উভয় পরিশোধের চাপও বাড়ছে।

বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে (এলডিসি) বাংলাদেশের সরকারি ও সরকারের (সভরেন) গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণ সবচেয়ে বেশি। এলডিসিভুক্ত ৪৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের কাছাকাছি কেউ নেই। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের ‘দ্য লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বিশ্বব্যাপী প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বর্তমানে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় আছে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট (সিডিপি) ২০২১ সালে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যাবে। একই বছর লাওস ও নেপাল এলডিসি থেকে বের হবে।

প্রতি বছর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা মূল্যায়ন করে আঙ্কটাড। গতকাল এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে এলডিসিভুক্ত ৪৬টি দেশের ২০২১ সাল শেষে সরকারি ও সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণের চিত্র এবং এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২১ সাল শেষে বাংলাদেশের সরকারি ও সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৪২৫ বিলিয়ন ডলার, ২০২০ সাল শেষে যা ছিল ৫৪ দশমিক ৭৮৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে বাংলাদেশের সরকারি ও সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাত দশমিক ৬৩৮ বিলিয়ন ডলার বা ১৩ দশমকি ৯৪ শতাংশ। সরকারি ও সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণ বাড়ার হার ২০২১ সালেই ছিল সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সরকারি ও সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণ ছিল ৪৬ দশমিক ৩৭৬ বিলিয়ন ডলার।

এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সরকারি ও সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণ অ্যাঙ্গোলার। দেশটির ঋণের পরিমাণ ৪৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইথিওপিয়ার এ ঋণের পরিমাণ ২৮ দশমিক ১৭১ বিলিয়ন ডলার। চতুর্থ অবস্থানে থাকা

 তানজানিয়ার সরকারি ও সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণ ১৮ দশমিক ৯১৭ বিলিয়ন ডলার ও পঞ্চম অবস্থানে থাকা সুদানের ১৫ দশমিক ৩০৫ বিলিয়ন ডলার। এলডিসিভুক্ত অন্য দেশগুলোর এ ধরনের ঋণ আরও কম।

আঙ্কটাডের তথ্যমতে, জিডিপির তুলনায়ও বাংলাদেশের সরকারি ও সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণ সর্বোচ্চ। ২০২১ সালে বাংলাদেশের এ ধরনের ঋণ দাঁড়িয়েছে জিডিপির ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ। অ্যাঙ্গোলার সরকারি ও সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণ জিডিপির ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ, ইথিওপিয়ার আট দশমিক ৪ শতাংশ, তানজানিয়ার পাঁচ দশমিক ৬ শতাংশ ও সুদানের পাঁচ শতাংশ। এলডিসিভুক্ত অন্য দেশগুলোর এ ধরনের ঋণ জিডিপির পাঁচ শতাংশেরও কম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ সরকারি ও সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণই বহুপাক্ষিক উৎস থেকে নেয়া। তবে এলডিসিভুক্ত কয়েকটি দেশের জন্য বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। বিশেষত ২০১৯-২০২১ সাল পর্যন্ত কয়েকটি দেশের সরকারি ব্যয়ের গড়ে ১০ শতাংশের বেশি গেছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল অ্যাঙ্গোলার ৩৩ শতাংশ ও বাংলাদেশে ২২ শতাংশ।

এদিকে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধের (ডেট সার্ভিসিং) চাপও বাড়ছে। ২০২০ সালে ডেট সার্ভিসিংয়ের পরিমাণ ছিল দুই দশমিক ০১৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক ৭৭২ বিলিয়ন ডলার।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে বাংলাদেশের সরকারি ও সভরেন গ্যারান্টিযুক্ত বিদেশি ঋণ ছিল ২১ দশমিক ১৪৬ বিলিয়ন ডলার। ২০১১ সালে তা বেড়ে হয় ২২ দশমিক ২১৮ বিলিয়ন ডলার, ২০১২ সালে ২৪ দশমিক ১৯৭ বিলিয়ন ডলার, ২০১৩ সালে ২৫ দশমিক ০৩৪ বিলিয়ন ডলার, ২০১৪ সালে ২৬ দশমিক ৫৩৮ বিলিয়ন ডলার, ২০১৫ সালে ২৭ দশমিক ০৯৪ বিলিয়ন ডলার, ২০১৬ সালে ২৯ দশমিক ০৮০ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭ সালে ৩৫ দশমিক ২৫৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮ সালে ৪১ দশমিক ২৮৫ বিলিয়ন ডলার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০