Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 4:41 pm

এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। ওই সময়ের পর থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে বাংলাদেশ। ওই সময় থেকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা সুযোগ-সুবিধা হারাবে। এর ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল এক সেমিনারে ব্যবসায়ীরা এমন শঙ্কা প্রকাশ করেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পের (এসএসজিপি) উদ্যোগে এলডিসি থেকে উত্তরণবিষয়ক এ জাতীয় সেমিনার আয়োজন করা হয়। সেমিনারের বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, ইআরডি সচিব শরিফা খান, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রমুখ।

ব্যবসায়ীরা যেসব চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন, তার মধ্যে রয়েছে- ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য রপ্তানির সুযোগ হারানো, ডব্লিউটিওর শর্তের কারণে নানা ধরনের ভর্তুকি প্রত্যাহার, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ, কৃষি ও মৎস্য ভর্তুকির সুবিধা হারানো, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রাপ্ত নানা ধরনের অনুদান হ্রাস পাওয়া, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চাঁদার পরিমাণ বৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত নানা ধরনের শিক্ষা বৃত্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার বর্তমানে বাংলাদেশে সে ধরনের প্রস্তুতি নেই বলে উল্লেখ করেন ব্যবসায়ীরা। এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য ব্যবসায়ীরা বেশকিছু পরামর্শ দেন। এসব পরামর্শের মধ্যে রয়েছেÑব্যবসা করার সুযোগ সহজ করা, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানি রোধ করা, তৈরি পোশাকের মতো অন্যান্য খাতের জন্য বন্ডে ওয়্যারহাউস সুবিধা নিশ্চিত করা, দক্ষ জনশক্তি তৈরির বিষয়ে জোর দেয়া, বিভিন্ন দেশের জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (পিটিএ) ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করা ইত্যাদি।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ২০২৬ সালের আগেই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পিটিএ বা এফটিএর মতো চুক্তি স্বাক্ষর করে বাণিজ্য সুবিধা আদায় করার জন্য আমরা অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিভিন্ন বিধিবিধানের আলোকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। ২০৩০ সালের আগেই সফলভাবে এসডিজি অর্জন করে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আমাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাবে। এ জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু বড় বাজার রয়েছে আমাদের। আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। ভারত একটি বড় বাজার, সেখানেও রপ্তানি বাড়ছে। তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। একটি পণ্যের ওপর রপ্তানি খাতকে ধরে রাখা ঠিক হবে না। আমাদের রপ্তানি পণ্য সংখ্যা বাড়াতে হবে, একই সঙ্গে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। এজন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

সেমিনারে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আমাদের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। বিশেষ করে বৈদেশিক বাজারে আমরা শুল্ক মুক্তভাবে পণ্য রপ্তানি করতে পারব না। তখন ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে আমাদের ১৩ থেকে ১৭ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। তখন আমাদের খরচও বেড়ে যাবে। তাই এজন্য এখন থেকে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। বৈদেশিক বাণিজ্য চুক্তিগুলো সঠিকভাবে করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসার পরিবেশের মানোন্নয়ন করতে হবে। যাতে করে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি আসতে পারে। পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন ব্যবস্থায় উন্নত কারিগরি (লজিস্টিক) সহায়তা বাড়াতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে প্রবেশগ্রম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের একটি বিশাল সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত। তবে এ খাতে বিনিয়োগের অভাবে তেমন সফলতা আসছে না। তবে বৈশ্বিক বাজারে এই খাতের পণ্যের চাহিদা রয়েছে। আমরা যদি ঠিকমতো এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারি তাহলে সফলতা আসবে। পাশপাশি এই খাতের উদ্যোক্তাদের  ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।