এলডিসি-পরবর্তী অভিঘাত মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিন

 

এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের পথে অনেক চ্যালেঞ্জে পড়বে দেশ। এসব চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা বেশিরভাগই অর্থনৈতিক। বিশেষ করে পণ্য রপ্তানি, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং দেশের অবকাঠামো খাত উন্নয়নে দাতা সংস্থার সহযোগিতা পাওয়ার বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।   চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এলডিসি উত্তরণ-সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জোর দেয়া হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো এবং রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারের পাশাপাশি নতুন বাজারের সন্ধান করা হচ্ছে। কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য। ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের তালিকা থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সাধারণত স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসবে পণ্য রপ্তানিতে। এলডিসি হিসেবে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এখন শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা থাকবে না। তখন রপ্তানি আয় ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবিসহ বড় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ ও অনুদান প্রাপ্তির বিষয়টি সংকুচিত হয়ে আসবে। সহজ শর্তের ঋণ আর পাওয়া যাবে না। এলডিসি উত্তরণ হওয়ার পর জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় চাঁদার পরিমাণ বেড়ে যাবে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হলে দেশের অর্থব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশকে কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তা আমরা কমবেশি জানি। কিন্তু এলডিসিতে উত্তরণের পর দাম বাড়বে অনেক ওষুধেরÑএমন জনঘনিষ্ঠ বিষয় আলোচনার বাইরে থেকে গেছে। বৃৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘ডব্লিউটিও নলেজ শেয়ার’ অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেছেন, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী বেশ কিছু ওষুধের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। তার মধ্যে ইনসুলিনসহ নতুন নতুন রোগের ওষুধ তৈরিতে আটগুণ পর্যন্ত খরচ বেড়ে যাবে।

ইইউর ২৮ দেশে জিএসপি প্লাস সুবিধা নেয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।  বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পিটিএ এবং এফটিএ করার উদ্যোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অভিঘাত নিয়েও ভাবতে হবে। এলডিসির পরে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে দেশ। কিন্তু দেশের নাগরিকরা যেন বিপদে না পড়ে সেটি অবশ্যই ভাবতে হবে। সর্বাত্মক প্রস্তুতি হবে এখন থেকেই। যেহেতু আমরা সামনের দিকে হাঁটতে চাই, তাই উচিত হবে এলডিসি-পরবর্তী অভিঘাত মোকাবিলায় মনোযোগ বাড়ানো এবং এ লক্ষ্যে সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০