Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:35 am

এলডিসি-পরবর্তী সম্ভাবনাময় রপ্তানি বাজার আফ্রিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছর আফ্রিকার দেশগুলোর আন্তঃবাণিজ্য ১৩৩ বিলিয়ন ডলারের হলেও বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মাত্র ১ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ আফ্রিকায় রপ্তানি করে। যদিও সেখানে বাংলাদেশের ওষুধ, টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য, পাটপণ্য ও পাদুকাসহ অন্যান্য পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ অবস্থায় এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য আরও বৃদ্ধিকল্পে আফ্রিকার বাজারে পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি সেখানে বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন ‘বাংলাদেশ ও আফ্রিকার মধ্যকার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহযোগিতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারের বক্তারা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন আয়োজন করেছে। এ সম্মেলনের পঞ্চম দিন গতকাল ‘বাংলাদেশ ও আফ্রিকার মধ্যকার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহযোগিতা’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

ওয়েবিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ দেড় বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মাত্র ১ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ আফ্রিকার দেশগুলোতে রপ্তানি হয়। তিনি বলেন, আফ্রিকার দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ প্রধানত তুলা আমদানি করে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের টেক্সটাইল, কৃষি, ফিশারিজ, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ খাতে আফ্রিকার বিনিয়োগ প্রায় ৩০৬ মিলিয়ন ডলার। আফ্রিকা ও বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালুকরণ, বাংলাদেশে আফ্রিকার দেশগুলোর দূতাবাস স্থাপন, এফটিএ ও পিটিএ স্বাক্ষরের ওপর জোরারোপ করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমাদের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ সুযোগ গ্রহণ করতে দেশের উদ্যোক্তাদের আরও উদ্যোমী হতে হবে।’ তিনি বলেন, ওষুধ, টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট ও পাটজাতপণ্য, চামড়া ও পাদুকা প্রভৃতি পণ্যেও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রী আফ্রিকা অঞ্চলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণে সরকারের পক্ষ থেকে নীতি সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আফ্রিকা মহাদেশে প্রচুর জমি রয়েছে, যেখানে আমাদের উদ্যোক্তারা তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান জানান, সারাবিশ্বের সঙ্গে আফ্রিকার বাণিজ্যের পরিমাণ ৮৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের মাত্র ৩ শতাংশ। গত বছর আফ্রিকার দেশগুলোর আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণ ১৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি উল্লেখ্য করেন, আফ্রিকার বাণিজ্য প্রধানত ‘আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট (আগোয়া)’ এবং ‘কমন মার্কেট ফর ইস্টার্ন অ্যান্ড সাউদার্ন আফ্রিকার (কমেসা)’ মাধ্যমে বেশি মাত্রায় প্রভাবিত হয়ে থাকে। তিনি জানান, আফ্রিকায় বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইপিবি ৫টি বাণিজ্য মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর আফ্রিকার দেশগুলোর উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি কাক্সিক্ষত মাত্রায় উন্নীত হচ্ছে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও বেশি হারে বাংলাদেশি পণ্য আফ্রিকাতে রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোরারোপ করেন ইপিবি প্রধান।

ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আফ্রিকা) মো. তারিকুল ইসলাম, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মোসাদ্দেক হোসেন অংশ নেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আফ্রিকা) মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, আফ্রিকায় অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলো সেখানকার বিভিন্ন চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশন এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়িত যোগাযোগ রাখছেন এবং আশা প্রকাশ করেন ভবিষ্যতে আফ্রিকাতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও সম্প্রসারণ হবে।

স্কয়ার ফার্মার পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোর ওষুধের মোট চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়ে থাকে; যার ফলে এ খাতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ওষুধ শিল্প আফ্রিকায় শিল্প-কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর বেশ স্বল্পতা রয়েছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বর্তমানে ১৫০টির অধিক দেশে ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে, যেটি আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এ ধরনের সম্ভাবনাময় বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সেখানকার দেশগুলোর রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর জোরারোপ করেন।

এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আব্দুস সামাদ আল আজাদ বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে আফ্রিকা থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে আমাদের আরও কাজ করতে হবে।