এলসিতে যাবে বিআইএনের তথ্য ভ্যাট অনলাইনে প্রবেশে ওটিপি

রহমত রহমান: ভ্যাট অনলাইনে একজনের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড অন্যজন ব্যবহার করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর ফলে প্রতিষ্ঠান যেমন ঝুঁকিতে পড়ছে, তেমনি সিস্টেমের তথ্য বেহাত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আবার অন্যের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সিস্টেমে জালিয়াতিও করা হচ্ছে। সিস্টেমকে আরও সুরক্ষিত ও জালিয়াতি রোধে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) চালু করা হচ্ছে। সিস্টেমে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিআইএনে দেয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মোবাইল নম্বরে ওই ওটিপি যাবে। সেই ওটিপি সিস্টেমে দেয়ার পর সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারবে। ভ্যাট অনলাইন সিস্টেমে ওটিপি চালুর কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এপ্রিল থেকে তা চালু হবে বলে আশা করছেন ভ্যাট অনলাইন কর্মকর্তারা।

ভ্যাট অনলাইন সূত্রমতে, ভ্যাট ব্যবস্থা সহজীকরণ করতে ভ্যাট অনলাইন সিস্টেম চালু করে এনবিআর। যার ফলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভ্যাট অফিসে না গিয়ে ঘরে বসেই রিটার্ন দাখিল ও ভ্যাট সংক্রান্ত সেবা নিতে পারে। তবে ভ্যাট অনলাইনে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন নিতে হয়। বিআইএন নিবন্ধন নিতে গেলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট অনলাইন সিস্টেমে একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড নিতে হয়। আবার বিআইএন নিতে গেলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পরিচয়পত্র, ঠিকানা, ব্যাংক হিসাব, মোবাইল নম্বর, আইআরসি, ই-টিআইএন এর তথ্যসহ বেশ কিছু তথ্য দিতে হয়। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভ্যাট অনলাইন সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে। তবে একজনের আইডি ও পাসওয়ার্ড অন্যজন সিস্টেমে প্রবেশ, রিটার্ন দাখিল, তথ্য নেয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। এতে সিস্টেমের তথ্য বেহাতসহ সিস্টেম ব্যবহারে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিস্টেমকে আরও সুরক্ষিত করতে ওটিপি চালু করা হচ্ছে। যার ফলে আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সিস্টেমে লগইন করলে সঙ্গে সঙ্গে বিআইএন দেয়া মোবাইল নাম্বারে একটি ওটিপি যাবে। ৫ মিনিটের মধ্যে সেই ওটিপি দিলেই সিস্টেম ওপেন হবে। আর ওটিপি দিতে না পারলে সিস্টেমে প্রবেশ করা যাবে না। আবার লগইন করার পর যদি কেউ ৫ মিনিট সিস্টেমে কাজ না করে অফ থাকে, তবে সিস্টেম অটোমেটিক লগ আউট হয়ে যাবে।

এই বিষয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক ও কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, এনবিআর অনুমোদন দিলে আগামী এপ্রিল নাগাদ সিস্টেম থেকে ওটিপি চালু করা হবে। ওটিপির সুবিধা তুলে ধরে তিনি বলেন, ওটিপি ব্যবস্থা চালু করার ফলে ভ্যাট অফিসের কেউ বা অন্য কোনো ব্যক্তি ওটিপি ছাড়া সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারবে না। সিস্টেমের অপব্যবহার কমে যাবে। যার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড, তিনি সিস্টেমে সহজে সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারবেন। সিস্টেমে থাকা ডাটা বা তথ্যের অপব্যবহার রোধ হবে। এছাড়া অনলাইন সিস্টেম আরও সুরক্ষিত হবে। ভবিষ্যতে কর্মকর্তাদের জন্য সিস্টেমে ‘টু ফ্যাক্টর’ ওটিপি চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। একটি নির্দিষ্ট হটলাইন নম্বর (১৬৫৫৫) থেকে এসএমএসের মাধ্যমে ওটিপি যাবে। ভ্যাট অনলাইন থেকে ইতোমধ্যে তিন বছরের জন্য তিন কোটি বাল্ক এসএমএস কেনা হয়েছে।

ভ্যাট অনলাইন সূত্রমতে, বর্তমানে নিবন্ধিত বিআইএন সংখ্যা ৪ লাখ ৭৯ হাজার। ভ্যাট অনলাইন ব্যবহার করে রিটার্ন দাখিল (দাখিলপত্র) ছাড়াও ই-পেমেন্ট ব্যবহার করে ভ্যাট অনলাইনে ভ্যাট পরিশোধ করা যায়। বেশিরভাগ ব্যাংকের মাধ্যমে ই-পেমেন্টে এই ভ্যাট পরিশোধ করা যায়। এছাড়া মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করেও ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করা যায়।

অপরদিকে, অনেক প্রতিষ্ঠান এলসি খোলার ক্ষেত্রে ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে। এই এলসির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানিতে জালিয়াতি করলেও অনেক সময় প্রতিষ্ঠানকে ধরা সম্ভব হয় না। এলসির জালিয়াতি রোধে বিআইএন এর তথ্য ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ইতোমধ্যে ভ্যাট অনলাইনের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক আলোচনা শুরু করেছে। ভ্যাট অনলাইন থেকে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিআইএন তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবহার করলে এলসি খোলার ক্ষেত্রে জালিয়াতি রোধ হবে বলে মনে করেন ভ্যাট অনলাইন কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে অনলাইনে এলসি খোলা হলেও প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য ম্যানুয়ালি বসাতে হয়। এতে অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য যাচাই সম্ভব হয় না। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠান যে ঠিকানা ব্যবহার করেছে, তা সঠিক কিনা, আইআরসি ও ইআরসি ভুয়া কিনা, আইআরসি ও ইআরসির মেয়াদ রয়েছে কি না, প্রতিষ্ঠান যে ঠিকানা ব্যবহার করেছেÑ তা সঠিক কি না প্রভৃতি। তবে ভ্যাট অনলাইনে বিআইএন নেয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব আপডেট তথ্য রয়েছে। যেমনÑ প্রতিষ্ঠানের সঠিক ঠিকানা, আইআরসি ও ইআরসি সঠিক কি না, মেয়াদ রয়েছে কিনা, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকের তথ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর, ই-টিআইএন নম্বর, প্রতিষ্ঠানের আরজেএসসির নিবন্ধনের তথ্য প্রভৃতি। এলসি খোলার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সঠিক তথ্য পেতেই বাংলাদেশ ব্যাংক বিআইএনের তথ্য ব্যবহার করতে চাই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এই বিষয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক ও কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিআইএনের তথ্য ব্যবহার করা হলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের নতুন করে কোনো তথ্য দিতে হবে না। প্রতিষ্ঠানের বিআইএন নম্বর দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাট অনলাইন সিস্টেম থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে ওই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য চলে যাবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের সব হালনাগাদ তথ্য এলসিতে চলে যাবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক এলসিতে ভুয়া তথ্য ব্যবহার করতে চাইলেও তা সম্ভব হবে না। এলসির মাধ্যমে জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এনবিআরের সমঝোতা চুক্তি রয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিআইএনের তথ্য ব্যবহার করতে পারবে। ইতোমধ্যে বিআইএন ব্যবহার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তারা বিআইএনের যেসব তথ্য ব্যবহার করবে, তারা রিকোয়ারমেন্ট দিলে আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেবো। আশা করি, দুই মাসের মধ্যে হয়ে যাবে। মূলত এলসিতে পারফেক্ট  ডেটার জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক বিআইএনের সাপোর্ট নিতে চাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সূত্রমতে, বর্তমানে তিন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, সব কাস্টম হাউস ও এলসি স্টেশন, অটোমেটেড চালান বা এ-চালান, ট্রেজারি চালান ইস্যু করার ক্ষেত্রে সব তফসিলি ব্যাংক, আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর বিআইএনের তথ্য ব্যবহার করে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০