Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 11:01 am

এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাড়তে থাকা এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি ধারাবাহিকভাবে কমছে। তবে আমদানি কমেনি। রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে নানা পণ্য আমদানির জন্য মোট ৫৭০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়, আগের মাস আগস্টের তুলনায় যা ৬৩ কোটি ডলার বা ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ কম। এলসি নিষ্পত্তি আগের মাসের চেয়ে ১৮ শতাংশের বেশি কমে ৬০০ কোটি ডলারে নেমেছে। এছাড়া গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

কভিডের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়েছে। এর প্রভাবে বাড়তে থাকা আমদানি কমিয়ে ডলার সাশ্রয়ের নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের টাকা ঠিকমতো ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে আগস্টে রেমিট্যান্স বাড়লেও সেপ্টেম্বরে তা কমেছে। একই সঙ্গে টানা ১৩ মাস ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পর দেশের রপ্তানি কমেছে। এতে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই থেকে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ কমতে শুরু করে। গত জুনে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৮৪৪ কোটি ডলার, যা জুলাইয়ে ৬৩৫ কোটি ডলারে নামে। আগস্টে এলসি খোলার পরিমাণ আরও কমে ৬৩৩ কোটি ডলারে নেমেছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে আরও কমে এর পরিমাণ ৫৭০ কোটি ডলারে নেমেছে।

তবে এলসি খোলার পরিমাণ যে হারে কমেছে, এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ একই হারে কমেনি। গত জুনে এলসি নিষ্পত্তি হয় ৭৫০ কোটি ডলারের। পরের মাস জুলাইয়ে এর পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৭৩৫ কোটি লাখ ডলারে। আগস্টে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ আরও কমে ৭৩২ কোটি ডলারে নেমেছে। সেপ্টেম্বরে ১৩২ কোটি কমে ৬০০ কোটি ডলারে নেমেছে।

আমদানি কমলেও ডলারের সংকট কাটছে না। এই অবস্থায় বাজারের সংকট কাটাতে ডলার বিক্রিও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৩৫০ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে রিজার্ভে চাপ বেড়েছে। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর ৯৬ টাকা নির্ধারণ করলেও সাম্প্রতিককালে ডলারের সংকট নিরসন ও প্রবাসী আয় বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলারের দাম নির্ধারণ করছে। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ সভায় এই দাম নির্ধারণ করা হয়।

বাফেদার ঘোষিত দাম অনুযায়ী, এখন থেকে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা কিনতে পারবে ব্যাংক। বাণিজ্যিক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়ন হবে প্রতি ডলার ৯৯ টাকায়। এ ছাড়া রেমিট্যান্স আহরণ ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ব্যাংকগুলোর গড় (ওয়েট অ্যান্ড এভারেজ) মূল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করতে পারবে ব্যাংকগুলো। গত সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স কেনার সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৮ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ‘টাকার বিনিময় মূল্য’ অংশে বলা হয়েছে, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে এবং বাফেদার নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তব্যাংক লেনদেন ও গ্রাহক লেনেদেনের জন্য টাকার বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো। সবশেষ ৩ অক্টোবরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা ২৫ পয়সা এবং সর্বনি¤œ ১০২ টাকা ৯০ পয়সা দেয়া রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এলসি নিস্পত্তি হয়েছে ৬৮৫ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ৬৫৬ কোটি, মার্চে ৭৬৭ কোটি, এপ্রিলে ৬৯৩ কোটি ও মে মাসে ৭০৫ কোটি, জুনে ৭৭৫ কোটি, জুলাইয়ে ৭৩৫ কোটি, আগস্টে ৭৩২ কোটি ও সবশেষ সেপ্টেম্বরে ৬০০ কোটি ডলার। চলতি বছরের ৯ মাসে ছয় হাজার ৩৫৪ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে।