শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল ইউরোপের দেশগুলো। ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনার পর থেকে রাশিয়ার তেল প্রত্যাখ্যান করে আসছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ। তাই এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলে তেল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। খবর: রয়টার্স।
গত বৃহস্পতিবার রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক এ ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি ইউরোপকে সতর্ক করে বলেন, তেলের বিকল্প সরবরাহ খুঁজে বের করতে হবে ইউরোপকে, যা আরও ব্যয়বহুল হতে পারে।
বুধবার ইউরোপের দেশগুলোর কার্যনির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়ান জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতার অবসান ও সবুজ শক্তির দিকে দ্রুত স্থানান্তরে ২১০ বিলিয়ন ইউরোর পরিকল্পনা প্রকাশ করে। চলতি মাসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন ঘোষণা দেন, ইইউর সদস্যদেশগুলো যাতে ২০২২ সালের পর রাশিয়ার তেল না কেনে, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের দেশগুলো প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ ব্যারেল রাশিয়ান তেল পায়। কিন্তু তারা রাশিয়ার তেল নিতে রাজি না হওয়ায় মস্কো এখন ইউরোপ ছেড়ে সেই সরবরাহ অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করতে প্রস্তুত। রাশিয়ার অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া ব্যয়বহুল অপরিশোধিত তেলও এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর জেরে দেশটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা দেয়। নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক তেল ক্রেতা রাশিয়ান কার্গো বিলম্বিত অথবা প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হন। ক্রেতাদের এই সিদ্ধান্ত রাশিয়ার তেল উৎপাদনে আঘাত হানে। নোভাক জানান, এপ্রিলে রাশিয়ার তেল উৎপাদন দিনে প্রায় ১০ লাখ ব্যারেলের কম ছিল। কিন্তু মে মাসে তেলের উৎপাদন বেড়ে যায়। আগামী মাসগুলোয় তেল উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। রাশিয়ার তেল রপ্তানি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং নতুন রপ্তানি বাজার খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি। কারণ রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদ অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে সস্তায় রাশিয়ার তেল কিনে অপরিশোধিত তেলের মজুত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে চীন। ইউরোপ যখন রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে, তখন মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার কথা ভাবছে চীন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চীনের সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানান, জ্বালানি তেলের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই সরকারি পর্যায়ে তেল কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। চীনের কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুতের জন্য অপরিশোধিত তেল কেনা হবে। মূলত রাশিয়ার তেলের দাম কমে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীন সস্তায় তেল কিনে মজুত বাড়াচ্ছে। জরুরি বা বিশেষ অবস্থায় ব্যবহƒত হবে এই তেল। তবে চীন কিংবা রাশিয়া কোনো দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। কী পরিমাণে তেল কেনা হবে অথবা তেল কেনার চুক্তিতে কী কী শর্ত থাকবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশের পক্ষে রাশিয়ার তেল বাদ দিয়ে টিকে থাকা অসম্ভব। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করার জন্য যখন ইইউ নেতারা সদস্য দেশগুলোর ওপর চাপ দিচ্ছেন তখন রুশ প্রেসিডেন্ট এই বক্তব্য দিলেন। রাশিয়ার বিভিন্ন তেল কোম্পানি ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার এক বৈঠকে পুতিন আরও বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও রাশিয়ার তেলের ওপর সম্ভাব্য অবরোধের ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে। তেলের বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে এবং আগের মতোই ব্যবসা বাণিজ্য চলছে। ফলে আগের মতো নিষেধাজ্ঞার মডেল আর কাজ করবে না। এজন্য এখন দরকার তেলের উৎপাদনকারী থেকে ক্রেতাদের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ যোগসূত্র তৈরি করা।