নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাস মহামারির শিকার দেশগুলোর মধ্য উত্থান-পতন থেমে নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবার পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠে গেছে প্রতিবেশী বৃহত্তম রাষ্ট্র ভারত। এ পর্যন্ত ভারতে করোনা শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৫৬৭ জনের। আর পাকিস্তানে রোগী আছে দুই হাজার ৪৫০ জন। একদিন আগেও পাকিস্তান ছিল শীর্ষে। ভারত, পাকিস্থানের পর শ্রীলঙ্কায় আক্রান্ত আর মৃত্যু বাড়ছে। বাংলাদেশেও এ আক্রান্ত থেমে নেই। তবে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে নেপাল ও ভুটান। সময় মতো পদক্ষেপ নেওয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার তুলনামূলক কম। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২৯ জানুয়ারি প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করে ভারত। এরপর অল্প অল্প করে রোগী বাড়তে থাকে দেশটিতে। আর পাকিস্তানে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় ধরে ভারতের চেয়ে পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে শনাক্ত হওয়া রোগী ছিল ২ হাজার ১১৮ আর ভারতে ১ হাজার ৯৯৮। এ সময় ভারতে মারা গেছে ৭২ জন আর পাকিস্তানে ৩৫ জন।
দক্ষিণ এশিয়ায় গত ২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করে নেপাল। আর ভুটানে প্রথম শনাক্ত হয় ৫ মার্চ। করোনা শনাক্তের শুরুতেই লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করে নেপাল ও ভুটান। এর ফল পেয়েছে দেশ দুটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ও ভুটানে স্থানীয়ভাবে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। দুই দেশের আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিদেশফেরত। দুই দেশেই আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র পাঁচজন করে। একটু দেরিতে হলেও লকডাউন ঘোষণা করে অনেকটা প্রতিরোধ করেছে মালদ্বীপ। দেশটিতে শনাক্ত হয়েছেন ১৯ জন। এ তিনটি দেশে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ মারা যাননি।
তবে ভাইরাস প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে আলোচিত লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় কিছুটা বিপাকে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলো। এ কারণেই পাকিস্তান ও ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে ইউরোপের মতো ভায়াবহ পরিস্থিতি হবে না বলে মনে করছেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা। এদিকে আক্রান্তের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাউই। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর ফলে করোনায় আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চলের সংখ্যা বেড়ে আজ দাঁড়িয়েছে ১৮১ টি।
আক্রান্ত শীর্ষ দেশগুলোয় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সব দেশেই এক থেকে দেড় মাস পরে বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র, ২৯ জানুয়ারি ইতালি, ৩০ জানুয়ারি স্পেন, ২৬ জানুয়ারি জার্মানি ও ২৩ জানুয়ারি ফ্রান্সে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে দেশগুলোয় করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চে।
ওই একই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আঘাত হানে করোনা। ২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা-আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে নেপাল। গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৫ জন। ২৬ জানুয়ারি করোনা শনাক্ত হয় শ্রীলঙ্কায়। এখন সেখানে রোগীর সংখ্যা ১৪৩ জন। ২৯ জানুয়ারি ভারত, ২৩ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান, ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান, ৫ মার্চ ভুটান, ৬ মার্চ মালদ্বীপ ও সর্বশেষ ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।
করোনা শনাক্তের শুরুতেই লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করে নেপাল ও ভুটান। এর ফল পেয়েছে দেশ দুটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ও ভুটানে স্থানীয়ভাবে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। দুই দেশের আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিদেশফেরত। ভুটানে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র চারজন। একটু দেরিতে হলেও লকডাউন ঘোষণা করে অনেকটা প্রতিরোধ করেছে মালদ্বীপ। দেশটিতে শনাক্ত হয়েছেন ১৮ জন। এ তিনটি দেশে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ মারা যাননি।
তবে ভাইরাস প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে আলোচিত লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় কিছুটা বিপাকে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলো। এ কারণেই পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপে স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছে রোগীরা। গতকাল পর্যন্ত পাকিস্তানে ১ হাজার ৯৩৮, ভারতে ১ হাজার ৩৯৭, আফগানিস্তানে ১৭৪, শ্রীলঙ্কায় ১৪৩, বাংলাদেশে ৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী সেদেশে এ পর্যন্ত মোট ২২ জনের দেহে করোনা ধরা পড়েছে। সংক্রমিতদের সবাই এসেছেন ইরান থেকে। পাকিস্তানের ডন পত্রিকার খবর অনুযায়ী, সে দেশে এখন পর্যন্ত মোট ১৯৫ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। এর মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় এ পর্যন্ত ৩৫ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন সেরে উঠেছেন। দ্বীপ দেশ মালদ্বীপে এ পর্যন্ত ১৩ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। সংক্রমিতদের সবাই বিদেশি। বড় সংকট এড়াতে মালদ্বীপে স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। গত ১২ই মার্চ এক মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। মালদ্বীপে এখন পর্যটক যাওয়া বন্ধ। হোটেল, রেস্তোরাঁ, রিসোর্টে পর্যটকদের রাখতে নিষেধ করেছে সরকার।
ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশে এখনো করোনায় সংক্রমিত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। তবে তিনি তার দেশকে একেবারে ঝুঁকিমুক্ত বলতে নারাজ। তার মতে, ভুটানকে শতকরা ৯৯ ভাগ করোনামুক্ত বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে আরও দুজন মারা গেছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও ৪ জন, ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ৩০ জন।
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির হিসাবে, এ পর্যন্ত ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগীর ৮১ শতাংশ মাত্র ১০টি দেশের। এর মধ্যে ৬টি দেশ ইউরোপের এবং ৩টি এশিয়ার। তবে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এককভাবে দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৬২৪ জন। যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইরান, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক মিলে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৯৯ জনে।