নিজস্ব প্রতিবেদক: এসআর গ্রুপের আরো তিনটি রেস্টুরেন্টের ৩২ কোটি ২৫ লাখ টাকার গোপন বিক্রয় তথ্য উদঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর বিপরীতে তিনটি রেস্টুরেন্ট ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে সাত কোটি ১৩ লাখ টাকা। তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সোমবার (১৯ অক্টোবর) এ মামলা করা হয়। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে এসআর গ্রুপের দুই হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট ফুড ভিলেজ লিমিটেড ও ফুড ভিলেজ প্লাস এর প্রায় ২০০ কোটি টাকার গোপন বিক্রয় তথ্য এবং সাড়ে ২৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। পরে মামলা করা হয়। ফুড ভিলেজ লিমিটেড, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বগুড়ার শেরপুর এবং ফুড ভিলেজ প্লাস একই মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে অবস্থিত।
এছাড়া একই গ্রুপের দি গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরির রাজধানীর গুলশান-২, যমুনা ফিউচার পার্ক ও ধানমন্ডি এলাকায় তিনটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধেও প্রায় ১৫ কোটি টাকার গোপন বিক্রির তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে।এতে প্রায় তিন কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা হয়েছে। এসআর গ্রুপের মালিক বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (জিএম সিরাজ)।

ড. মইনুল খান জানান, এসআর গ্রুপের আরো তিনটি রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এই মামলা করা হয়। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে-সুং ফুড গার্ডেন, ১৫/৫ বিজয় নগর, আকরাম টাওয়ার, ঢাকা; গার্লিক এন জিঞ্জার, ইম্পেরিয়াল আমিন আহাম্মেদ সেন্টার, (৭ম তলা), বাড়ি নং-৫৪, রোড-১০/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২১২ এবং গার্লিক এন জিঞ্জার, দোকান নং-১, সি-৩৭, ১ম তলা, যমুনা ফিউচার পার্ক, ঢাকা-১২১২।

তিনি জানান, ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বর ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল রাজধানীর নিকুঞ্জ-১ এর ৪৬ নম্বরের লেকড্রাইভের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার ও ফেরদৌসী মাহবুব নেতৃত্ব দেন। এতে এসআর গ্রুপের মালিকানাধীন এই তিনটিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত ও গোপনকৃত বিক্রয় তথ্য পাওয়া যায়। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে আজ এই তিনটি রেস্টুরেন্টের ফাঁকির হিসাব চূড়ান্ত ও সেই সূত্রে ভ্যাট আইনে পৃথক তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দার প্রাথমিক অনুসন্ধান অনুযায়ী, সুং ফুড গার্ডেন নামের প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে ছয় কোটি ৩৪ লাখ টাকা। কিন্তু অভিযানে জব্দকৃত কাগজপত্র থেকে প্রাপ্ত প্রকৃত মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় ২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এখানে ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ১ কোটি ২ লাখ টাকা।

অপরদিকে, গার্লিক এন জিঞ্জার নামীয় প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে ৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। কিন্তু জব্দকৃত তথ্যে দেখা যায়, তাদের প্রকৃত মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয়মূল্য ১৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। এখানে ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৯০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, গার্লিক এন জিঞ্জার নামের প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয় ঘোষণা দিয়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এর প্রকৃত ভ্যাট আরোপযোগ্য বিক্রয়মূল্য ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এখানেও ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে ৭৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় একইভাবে মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ আরোপযোগ্য ২৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

ড. মইনুল খান জানান, মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গার্লিক এন জিঞ্জার ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেট এবং বাকি দুটো ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হয়েছে। এসআর গ্রুপের বিরুদ্ধে এই তিনটিসহ এ পর্যন্ত আটটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যাতে বিক্রির তথ্য গোপন পাওয়া গেছে ২৪৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর এতে ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
আরো পড়ুন-
এসআর গ্রুপের দুই হাইওয়ে রেস্টুরেন্টের ভ্যাট ফাঁকি ২৬ কোটি
###