গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘তিন মাস ধরে ঝুলে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা’ শীর্ষক খবরটি কৌতূহলোদ্দীপক। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরেই এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ নিচ্ছে কিছু ব্যাংক। অভিযোগ রয়েছে, এসএমই ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ১৪ ধরনের সার্ভিস চার্জ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে রয়েছে লোন প্রসেসিং ফি, লোন অ্যাপ্লিকেশন ফি, ডকুমেন্টেশন ফি, সার্ভিস চার্জ, আরলি সেটেলমেন্ট ফি, পারশিয়াল সেটেলমেন্ট ফি, রি-শিডিউল ফি, লিমিট এক্সচেঞ্জ ফি, লিগ্যাল ফি, অ্যাপ্রাইজাল ফি, লেট পেমেন্ট ফি, সিআইবি চার্জ, স্ট্যাম্প চার্জ ও রিনিউয়াল ফি। প্রথম কথা হলো, এই ১৪ ধরনের সার্ভিস চার্জের মধ্যে আটটির বিষয়ে এতদিন জানতো না বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা বাহুল্য, এগুলো হিডেন চার্জ। অথচ বিআরপিডি সার্কুলার নং-১৯/২০০৯’তে স্পষ্ট বলে দেওয়া আছে, ‘ঘোষিত বা প্রকাশিত তালিকাবহির্ভূত কোনো চার্জ বা ফি আরোপ করা যাবে না। চার্জ বা ফি’র কোনো পরিবর্তন হলে আবশ্যিকভাবে ব্যাংক তার স্ব-স্ব ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি বিভাগকে অবহিত করতে হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় এসব বিষয়ে আলোচনা করে তা যৌক্তিককরণের ব্যবস্থা করবে’। এক্ষেত্রে এসএমই ঋণের সার্ভিস চার্জের আওতায় যা আছে, সেটি যথাযথ জবাবদিহিতায় আনা দরকার। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, সব মিলিয়ে যত চার্জ আরোপ করা হয়েছে এসএমই ঋণগ্রহীতাদের ওপর, এতে আর্থিক বোঝা তো আছেই প্রক্রিয়াগত কারণেও হয়রান হতে হচ্ছে তাদের। এ হয়রানি ও জটিলতা নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত ছিল সব ব্যাংককে দ্রুত নির্দেশনা প্রদান করা। দুঃখের সঙ্গে আমরা জানতে পারলাম, সেখানেও দীর্ঘসূত্রতায় আটকে আছে এসএমই ঋণের সার্ভিস চার্জ কমানো সংক্রান্ত নির্দেশনা। এ অচলাবস্থার দ্রুত অবসান হওয়া প্রয়োজন।
অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রত্যাশিত নির্দেশনা দীর্ঘসূত্রতায় আটকে যাওয়া কোনো প্রক্রিয়াগত জটিলতা নয়। বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক পক্ষই নাকি চায় না এসএমই ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে ওই নির্দেশনাটি প্রকাশিত হোক। কারণ তাদের কাছে ‘অনুরোধ’ রয়েছে নির্দেশনাটি না দেওয়ার। এসএমই ঋণের ওই ১৪ রকম সার্ভিস চার্জ থেকে ব্যাংকগুলোর যা আয় হয়, তা নাকি নগণ্য নয়। কিন্তু আলোচ্য নির্দেশনাটি দেওয়া হলে সে আয় হ্রাস পাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তাদের ‘অনুরোধ’ আসা অস্বাভাবিক নয়। সেটি নিয়মের মধ্যে পড়ে, নাকি নিয়মবহির্ভূত সে বিতর্কেও আমরা যাচ্ছি না। কথা হলো, এসএমই ঋণগ্রহীতাদের স্বার্থ উপেক্ষা করে ব্যাংক মুনাফার পক্ষে অবস্থান করাটা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না। যদি না পড়ে, তবে আমরা দ্রুত এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রত্যাশা করবো। দেশে এসএমই ঋণগ্রহীতাদের সার্বিক অবস্থা জানতে বাকি নেই। তুলনামূলকভাবে শক্ত শর্তেই ঋণ নিতে হয় তাদের। আবার ঋণের পরিমাণ যা-ই হোক, তা আদায়ের সময় খেলাপিদের ওপরই বেশি মনোযোগ থাকে সবার। অথচ বিশেষজ্ঞরা বার বার বলে আসছেন, এসএমই খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ঋণনীতি শিথিল করা দরকার। সেটি না করে উল্টো তাদের ওপর বাড়তি সার্ভিস চার্জ চাপিয়ে দেওয়াটা কোনো কাজের কথা হতে পারে না। ফলে ব্যাংকের ‘অনুরোধ-উপরোধ’ যেটিই থাকুক, অবিলম্বে এসএমই ঋণের সার্ভিস চার্জ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দেবেএটিই প্রত্যাশিত।
Add Comment