Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 4:55 am

এসএমই ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম গুলিয়ে ফেলছে ব্যাংকাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সব ঋণে সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনলে উপকৃত হবে অর্থনীতি। কিন্তু ব্যাংকাররা এসএমই খাতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে চাচ্ছেন না। তারা এসএমই ও ক্ষুদ্রঋণকে গুলিয়ে ফেলছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কর্মসংস্থানে বেশি ভূমিকা রাখে এসএমই খাত। আমরা এ খাতেও ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার দাবি করছি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে অনেক দক্ষ জনশক্তি চাকরি হারাবেন। এ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের উদ্যোক্তা তৈরি করা সম্ভব এসএমইর মাধ্যমে। ডিসিসিআই এটি করার পরিকল্পনা করছে। এতে কয়েকটি দাতাগোষ্ঠীও তহবিল জোগান দেবে।

দেশের সমসাময়িক অর্থনীতির অবস্থান ও ২০২০ সালে ডিসিসিআইর বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়।

খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি ও সরকারের ব্যাংকঋণ-নির্ভরতাবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণ বাড়বে। কিন্তু কারা ইচ্ছাকৃত খেলাপিÑতা বাংলাদেশ ব্যাংককে খুঁজে বের করতে হবে। বাজেটের ঘাটতি মেটানো ও বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণে সরকার ব্যাংক খাত থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে তেমন সমস্যা হবে না।

৯ শতাংশ ব্যাংক ঋণ নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ৯ শতাংশ ব্যাংক ঋণের সুদহার বাস্তবায়ন এর আগে বেশ কয়েকবার পিছিয়েছে। এটি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ মহল পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা চাই এবার সঠিক সময়ে এক অঙ্কে ব্যাংক ঋণের বিষয়টি বাস্তবায়ন হবে।

মার্কিন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে জিএসপি সুবিধা ফের আদায়ে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের প্রয়োজন আছে কি নাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, তৈরি পোশাক খাতের জিএসপি বাতিল রাজনৈতিক কারণে হয়নি। কিন্তু রপ্তানি বৃদ্ধিতে ২০২৪ সালের পরে আমাদের জিএসপি সুবিধার প্রয়োজন হবে। এ সুবিধা আদায়ের জন্য সরকারের অর্থনৈতিক কূটনীতির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের বিষয়টি ‘ইতিবাচক’ উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সম্প্রতি পুঁজিবাজারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি এতে সমস্যার সমাধান হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে ডিসিসিআই যেক’টি খাতের ওপর অগ্রাধিকার দেবে তার মধ্যে পুঁজিবাজার রয়েছে। বছরটিতে বন্ড মার্কেটের পলিসি উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এতে একদিকে উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থের জোগান হবে, অন্যদিকে বন্ডে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা পাঁচ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন।

পুঁজিবাজারের সমস্যার কারণও তুলে ধরেন ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী উভয়ের মধ্যে ডে-ট্রেডিং মানসিকতা রয়েছে। বন্ড মার্কেটের অভাব রয়েছে। এর সঙ্গে ভালো কোম্পানিরও অভাব রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য ১১ খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানায় ডিসিসিআই। এর মধ্যে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, জনশক্তি উন্নয়ন, অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানো, পুঁজিবাজার পুনর্গঠন, জ্বালানি নিরাপত্তা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, ইজ অব ডুইং বিজনেসে অগ্রগতি, গবেষণা ও উন্নয়ন, অবকাঠামো ও এসএমই খাতে জোর দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এনকেএ মবিন, সহসভাপতি মোহাম্মদ বাশিরউদ্দিন পরিচালক আরমান হক, আশরাফ আহমেদ, দীন মোহাম্মদ, এনামুল হক পাটোয়ারী, ইঞ্জি. আল আমিন, রাশেদুল করিম মুন্না, জিয়া উদ্দিন, মনোয়ার হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার শামসুজ্জোহা চৌধুরী, এসএম জিল্লুর রহমান ও ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।