নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারির ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক এসএমই খাতে উৎপাদন ও বিপণন সবেচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ খাতের হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তিনি করোনা সংকটের ফলে সৃষ্ট অর্থনীতি ও শ্রমবাজারের অভিঘাত মোকাবিলায় শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও পরিবারের সুরক্ষা এবং উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
শিল্পমন্ত্রী বৃহস্পতিবার এসএমই ফাউন্ডেশন ও ফ্রাইডরিচ-ইবার্ট-স্টিফটাংয়ের বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিস আয়োজিত ‘করোনা মহামারি ও এসএমই: অভিঘাত প্রশমন নীতিমালা এবং ভবিষ্যৎ বিতর্কÑবাংলাদেশে প্রভাব এবং বিশ্বের প্রতিক্রিয়া থেকে শিক্ষা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে এ আহ্বান জানান।
এসএমই ফাউন্ডেশনে চেয়ারপার্সন ড. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারের মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও ফ্রাইডরিচ-ইবার্ট-স্টিফটাংয়ের বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রতিনিধি টিনা ব্লম প্রমুখ।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি প্রফেসর ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না প্রমুখ অনলাইনে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনার ফলে এসএমই খাতের অভিঘাত মোকাবিলায় সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এ খাতের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উজ্জীবিত করে নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এ প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ধীরে ধীরে এসএমই খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীদের মতামত ও অভিজ্ঞতা থেকে এসএমই খাত পুনরুদ্ধারে একটি কার্যকর রোডম্যাপ ও কর্মসূচি প্রণয়ন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, চিত্তাকর্ষক ডিজাইনের পাশাপাশি গুণগত মান ও মূল্যের বিচারে সাশ্রয়ী হওয়ায় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এসএমই পণ্যের টিকে থাকার সক্ষমতা বেশি। বিশেষ করে বাংলাদেশে এসএমই শিল্প খাতকে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এ খাত কর্মসংস্থান, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, নারীর আর্থিক ক্ষমতায়ন ও রপ্তানি আয় বাড়াতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। রূপকল্প-২০২১, ২০২৪ সালের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্য অর্জন এবং ২০৪১ সাল নাগাদ শিল্পোন্নত বাংলাদেশ গড়ার মতো সরকার-নির্ধারিত উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনে এসএমই খাত ভূমিকা রেখে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মূল প্রবন্ধে ড. আতিউর রহমান এসএমই খাতের অর্ধেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানই দেশের বড় দুটি শহরে অবস্থিত বলে উল্লেখ করে বলেন, অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য এসএমই খাতকে সম্প্রসারিত করার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ২৬ শতাংশ এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৪৮ শতাংশ রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি আশাপ্রদ দিক। করোনার প্রভাব থেকে এসএমই খাত যাতে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য অংশীজনদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়িয়ে উদ্ভাবনী উপায়ে প্রণোদনার প্যাকেজের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।