নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা দেশেই ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে এবং এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা এখনও প্রণোদানা প্যাকেজ থেকে আশাব্যঞ্জক পরিমাণে ঋণ সহায়তা পাননি। এ অবস্থা মোকাবিলায় দ্রুত এসএমই লিংকেজ নীতিমালা প্রণয়ন, দেশের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দ্রুত প্রণোদনার প্যাকেজ থেকে ঋণ সহায়তা নিশ্চিতকরণ এবং কভিড সময়ে বকেয়া ট্যাক্স, ভ্যাট, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল এক বছর স্থগিত রেখে পরবর্তী বছরে তা কিস্তিতে পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন ডিসিসিআই নেতারা।
গতকাল ‘পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের অবদান বজায়ে রাখার লক্ষ্যে চলমান পরিস্থিতিতে সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের জন্য করণীয় নির্ধারণে এলাকাভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যবসায়ী সমিতিসমূহের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ দাবি জানায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) নেতারা।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই’র সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা রয়েছেন প্রায় ১৩ মিলিয়ন, জিডিপিতে যাদের অবদান ২৫ শতাংশ এবং এ খাতে মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৩৫ দমমিক পাঁচ শতাংশ লোক জড়িত।
তিনি জানান, বাংলাদেশের মোট রপ্তানিতে এসএমই উদ্যোক্তাদের অবদান প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ। তিন বলেন, কভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং সরকারের ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা প্রদানের ব্যাংকগুলোও তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
চেম্বার সভাপতি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডিসিসিআইয়ের সদস্যদের সরকার ঘোষিত প্রণোদনার প্রাকেজ থেকে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরিতে ‘এসএমই ডেভেলপমেন্ট বিভাগ’ স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা শুরু হয়েছে, যার কারণে আক্রান্ত এলাকায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে এবং সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মালিক, ঢাকা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি হোসেন এ সিকদার, বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন এবং বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মওলা অংশগ্রহণ করেন।
আলাউদ্দিন মালিক বলেন, পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর সময়ে লকডাউন থাকার কারণে বন্ধ ছিল, ফলে এ খাতের উদ্যোক্তারা উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেনি, যার কারণে এ খাতের উদ্যোক্তা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি এ খাতের সঙ্গে ডাইয়ং, এমব্রোয়ডারিসহ অন্যান্য খাতের উদ্যোক্তা জড়িত, তাই এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্যাকেজ হতে আর্থিক নিশ্চিতকরণের আহ্বান জানান। তিনি ঈদুল আজহা উপলক্ষে শপিংমল ও দোকানপাট সন্ধ্যা ৭টার পরিবর্তে এক ঘণ্টা বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
হোসেন এ সিকদার বলেন, কেরানীগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় ১২০টি শিল্প রয়েছে, তবে কভিড-১৯ এর কারণে স্থানীয় বাজারের চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়া, বিক্রি কমে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন এবং শ্রমিকদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের ছোট ছোট কারখানা পুরোনো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, তবে এ খাতের উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে সমন্বিত কোনো প্রকল্প এখনও নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারির কারণে এ খাতের উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা এখন বিক্রি করতে পারছে না।
মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, এ খাতের বেশিরভাগ উদ্যোক্তাদের ব্যাংক হিসাব না থাকায় প্রণোদানার প্যাকেজ থেকে ঋণ সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা কম, এক্ষেত্রে যাদের ব্যাংক হিসাব নেই এ ধরনের উদ্যোক্তাদের সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সুপারিশক্রমে ব্যাংক ঋণ সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানান।