বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করছে তৈরি পোশাক খাত। এ অবস্থানে আসার পেছনে খাতসংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠান ও গ্রুপের অবদান রয়েছে। মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি দেশ ও দশের জন্য কাজ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এদেরই একটি এসএম নিটওয়্যার্স লিমিটেড। শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান এসএম নিটওয়্যার্স। প্রতিষ্ঠানটি সংক্ষেপে ‘এসএমকেএল’ নামেও পরিচিত।
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এসএমকেএল। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই সফল এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠা বছরে তাদের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল চার দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলার। সেই থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল ৭০ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১৬ সালে ছিল ৬৪ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলার; ২০১৫ সালে ছিল ৬২ মিলিয়ন ডলার। এ বছরে ৭৮ মিলিয়ন টার্নওভারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, অতীতের মতো এবারও সে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এসএম নিটওয়্যার্স।
নারী, পুরুষ ও শিশুদের উপযোগী পণ্য তৈরি করে থাকে এসএম নিটওয়্যার্স। পুরুষদের জন্য ৪০ শতাংশ ও বাকি ৬০ শতাংশ নারী ও শিশুদের জন্য পণ্য তৈরি করা হয় এখানে। পণ্যের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গেল জার্সি, পিক, ইন্টারলক, লিক্রা জার্সি, লিক্রা পিক, ফ্ল্যাট নিটেড কলার ও কাফ, ফ্লিস, ভ্যারিয়েগেটেড রিব, ফিডার স্ট্রাইপ প্রভৃতি। গুণগত মানে অনন্য এর পণ্য। গ্রাহকের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে বিশ্বখ্যাত অনেক নামকরা ব্র্যান্ড তাদের গ্রাহক তালিকায় রয়েছে। কয়েকটি ব্র্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি তুলে ধরা যেতে পারে। তাদের গ্রাহক তালিকায় রয়েছে নেক্সট, জারা, হ্যাংগোটেন, টোরে, ডানস স্টোরেস, বেঞ্চ, সোলকালঅ্যান্ডকো, স্প্যালাশ, এনকেডি, ক্যারিফুর, পিয়াজাইটালিয়া, স্পোর্টস ডিরেক্ট, প্রাইমার্ক, কেমার্ট, এলসি ওয়াইকিকি, এলপিপি, রিভার আইল্যান্ড, এলআইডিএল প্রভৃতি। এ প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ ক্রেতা ইউরোপের। ৭৫ শতাংশ পণ্য ইউরোপের দেশগুলোর নামকরা ব্র্যান্ডের। ১০ শতাংশ রফতানি করা হয় দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকায়। বাকি ১৫ শতাংশ এশিয়ার বিখ্যাত ব্র্যান্ডের। বোঝাই যায়, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করছে এসএম নিটওয়্যার্স।
প্রতিষ্ঠানটির কারখানা গাজীপুরের ভবানীপুরে। এখানে মাসে প্রায় ৭৫০ টন নিট ফ্যাব্রিকস উৎপাদনসক্ষমতা রয়েছে। মাসে প্রায় ১০ লাখ প্রিন্টিং করা যায়। মাসে চার লাখ পিস এমব্রয়ডারি, চার লাখ পিস ওয়াশিং, ৩২ লাখ কাটিং ক্ষমতা রয়েছে কারখানাটির।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার পাশাপাশি বিকেএমইএ’র কমপ্লায়েন্স মেনে চলা হয় এখানে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিবেশ বেশ উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত। কারখানাটির কর্মপরিবেশ অনন্য। এখানে শিশুদের জন্য আলাদা স্থান রয়েছে। কর্মীদের চলাফেরায় যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য প্রশস্ত করিডোর রয়েছে। ওয়াশরুমগুলো আধুনিক,
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আবাসিক মেডিক্যাল সুবিধা রয়েছে কারখানাটিতে। প্রায় ১০ হাজার ৮৮০ বর্গফুটের একটি বাগান রয়েছে কারখানাটির অভ্যন্তরে। পাম্প হাউজ, কুলিং ওয়াটার, নিজস্ব ওয়াশিং, ফিনিশিং, ডায়িং ইউনিট রয়েছে। আরও রয়েছে কার্টন স্টোর, কেমিক্যাল স্টোর, ওয়েস্টেজ স্টোর প্রভৃতি। কর্মীদের নামাজের জন্য আলাদা কক্ষের পাশাপাশি রান্নাঘর ও ডাইনিংয়ের পাশাপাশি ডরমেটরিও রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব পলিব্যাগ, ইলাস্টিক, ড্র স্ট্রিং ও কার্টন তৈরির কারখানা রয়েছে। এসএম নিটওয়ার্সের কারখানাটি গ্রিন বা পরিবেশবান্ধব। এখানে বিশ্বমানের এফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) বা বর্জ্য পরিশোধন প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। দূষণ বন্ধে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এখানে। শুধু তা-ই নয়, ইটিপিতে পরিশোধিত পানি পুনরায় ব্যবহার করা হয়। এখানে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়Ñএমন সব পদ্ধতি মেনে চলা হয়। গ্রিন বিল্ডিং ক্যাটেগরিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কারখানাটি।
এসএম নিটওয়ার্সে কর্মরত প্রায় সাত হাজার ৪০০ কর্মী। তাদের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার ৪১০ গার্মেন্টকর্মী রয়েছেন। কোয়ালিটি সেকশনে রয়েছেন প্রায় ৫৪০ জন। নিটিং ও ডায়িং সেকশনে কর্মীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার ১৫০। এখানে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন প্রায় ৩৬ জন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার প্রায় ৪৪ জন।
এসএম নিটওয়ার্সের ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান। পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন আবদুল রহমান ওয়াই আল বিঘিসি, খায়াত ঘাসান জ্যাক, ফারাহ এ মজিদ ফারাহ, সৈয়দ এ কে কামরুজ্জামান, আনোয়ারা বেগম ও সৈয়দ মোহাম্মদ মারজান।
অর্জন
প্রিন্টিং, ফ্যাব্রিকস ও গার্মেন্টের ক্ষেত্রে ওকিও-টেক্স স্ট্যান্ডার্ড ১০০ প্রোডাক্ট ক্লাস সার্টিফায়েড
চতুর্থ এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১২
বাংলাদেশ সরকারের বেস্ট ওয়ার্কারস ফ্রেন্ডলি ইন্ডাস্ট্রিজ ২০০৮ ও ২০০৯
একই সঙ্গে ওকিও-টেক্স স্ট্যান্ডার্ড, জিওটিএস, ওসিএস ১০০, ওসিএস ব্লেন্ড, ফেয়ার ট্রেড সার্টিফায়েড প্রতিষ্ঠান এই এসএম নিটওয়্যার্স।
রতন কুমার দাস
