নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গতবার তা ছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন পরীক্ষার্থী।
গতকাল রাজধানীর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ১৭ লাখ ৯২ হাজার ৩১২ জন। পাস করেছে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ২১১ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক শূন্য আট। আর মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের দুই লাখ ৯২ হাজার ৫৬৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে দুই লাখ ৭২ হাজার ৭২২ জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক লাখ ৫৫ হাজার ৫১৪ জন পরীক্ষা দিয়েছে। এর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৬১৩ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ৪৯। তাছাড়া, বিদেশের ৯টি কেন্দ্রে ৪১৬ জন অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৩৯৮ জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
সব মিলিয়ে চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন। এর মধ্য উত্তীর্ণ হয়েছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এই বোর্ডে সবচেয়ে বেশি, ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর সবচেয়ে কম পাসের হার বরিশাল বোর্ডে, ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ।
গত বছর পাসের হারে পিছিয়ে থাকা সিলেট বোর্ড এবার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ পাসের হার নিয়ে। এরপরই রয়েছে কুমিল্লা বোর্ড, তাদের পাসের হার ৯৬ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এর আগে টানা আটবার পাসের হারে শীর্ষ ছিল রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এবার এ বোর্ডের ৯৪ দশমিক ৭১ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। প্রতিবারের মতো এবারও জিপিএ-৫ এ সবার উপরে রয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা, এ শিক্ষা বোর্ডের ৪৯ হাজার ৫৩০ জন শিক্ষার্থী পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে।
২০০১ সালে এসএসসিতে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর থেকেই এই স্থানটি ধরে রেখেছে ঢাকার শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে কম জিপিএ-৫ পেয়েছে সিলেট বোর্ড। এই বোর্ডের চার হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এবারও পাসের হারে ছেলেদের পেছনে ফেলেছে মেয়েরা, জিপিএ-৫ পাওয়ার দৌড়েও তারা এগিয়ে আছে। চলতি বছর ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ছাত্রী মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে, যেখানে ছাত্রদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। পূর্ণাঙ্গ জিপিএ, অর্থাৎ পাঁচে পাঁচ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে বড় ব্যবধানে।
জিপিএ-৫ পাওয়া এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯ হাজার ৭৬২ জন ছাত্র; আর এক লাখ তিন হাজার ৫৭৮ জন ছাত্রী। সেই হিসেবে ২৩ হাজার ৮১৬ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
গত চার বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাসের হারের দিক থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। গত বছর ছাত্রদের পাসের হার যেখানে ৮২ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছিল; ছাত্রীদের মধ্যে পাস করেছিল ৮৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর গতবার জিপিএ-৫ পাওয়া এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ হাজার ৭৫৪ জন ছিল ছাত্র এবং ৭০ হাজার ১৪৪ জন ছাত্রী।
২০২১ সালের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ছিল ১১ লাখ ৪২ হাজার ৯৪ জন, পাস করেছে ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬২৮ জন। অন্যদিকে ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৩০১ জন ছাত্রীর মধ্যে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছে।
চলতি বছর ৯টি সাধারণ বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে ৯৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছাত্র ও ৯৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ ছাত্রী পাস করেছে। মানবিকে ৯২ দশমিক ০৯ শতাংশ ছাত্র ও ৯৪ দশমিক ১১ শতাংশ ছাত্রী এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশ ছাত্র ও ৯৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে।
ভালো ফলের হিসাবে বরাবরের মতোই এগিয়ে আছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ভালো ফলে পিছিয়ে থাকলেও এবার মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে উত্তীর্ণের হার বেড়েছে। ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগে ৯৬ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৯৩ দশমিক ৪১ শতাংশ ও মানবিক বিভাগে ৯৩ দশমিক ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
উল্লেখ্য, এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা, ইংরেজির মতো আবশ্যিক বিষয়গুলোতে পরীক্ষা না নিয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।
শিক্ষামন্ত্রী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানান, এবার তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হলেও অন্যান্য বিষয়গুলোতে জেএসসি ও জেডিসি ফলাফলের ভিত্তিতে ফলাফল দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ নভেম্বর সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়ে ৩০ নভেম্বর শেষ হয়। মাত্র এক মাসের মধ্যেই এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলো। কভিড পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন শ্রেণি পাঠদান না হওয়ায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হয় এ পরীক্ষা। একজন শিক্ষার্থী নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। আবশ্যিক বিষয়ে এ বছর পরীক্ষা হয়নি।