নিজস্ব প্রতিবেদক: মহামারির দুই বছরে পিছিয়ে যাওয়া এসএসসি ও এইচএসসির সূচি আগামী বছর আরও একটু এগিয়ে এনে সব বিষয়ে এবং পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০২৩ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষা এপ্রিলে এবং এইচএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষা জুনে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা।
২০২৩ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষা ২০২২ সালের পরীক্ষার জন্য ঘোষিত সিলেবাস অনুযায়ী হবে। আর ওই বছরের এইচএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষা ২০২২ সালের জন্য নির্ধারিত ১৮০ কর্মদিবসের পাঠ্যসূচি অনুসারে হবে। পরীক্ষা সব বিষয়ে এবং পূর্ণ নম্বরে হবে।
দীপু মনি জানান, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং এইচএসসি ও সমমানে মার্চ পর্যন্ত চলবে।
বর্তমানে যারা দশম শ্রেণিতে তারা ২০২৩ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেবে। নবম শ্রেণিতে তারা ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরাসরি শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সুযোগ পায়নি। ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত সপ্তাহে দুদিন করে সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওমিক্রনের সংক্রমণে ফের প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।
২০২২ সালের ১৫ মার্চ থেকে তারা সপ্তাহে ৬ দিন করে সরাসরি শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সরাসরি ক্লাস অব্যাহত থাকলে এই পরীক্ষার্থীরা নবম ও দশম শ্রেণি মিলে মোট ১৬২ কর্মদিবস ক্লাস করার সুযোগ পাবে। অথচ এমনিতে স্বাভাবিক অবস্থায় এসএসসিতে মোট ৩১৬ কর্মদিবস ক্লাস করার কথা।
দীপু মনি বলেন, এরা ২০২০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা দিতে পারেনি, নবম শ্রেণিতে পরীক্ষা দিতে পারেনি। যদিও এই পুরো সময়টায় টেলিভিশনের ক্লাসে ও অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়েছে, অ্যাসাইনমেন্ট করেছে। এসব ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্টগুলো ২০২২-এর পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ১৫০ কর্মদিবসের পরিমার্জিত পাঠ্যসূচি অনুসারে পরিচালিত হয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় ২০২৩ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষা ২০২২ সালের পরিমার্জিত পাঠ্যসূচি অনুসারে অনুষ্ঠিত হবে।
বর্তমানে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ২০২৩ সালে এইচএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেবে। এই শিক্ষার্থীদের ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস করার কথা ছিল। কিন্তু তারা ক্লাস শুরু করতে পেরেছে ২০২২ সালের ২ মার্চ থেকে, অর্থাৎ শুরুতেই তারা ৮ মাস ক্লাস করার সুযোগ পায়নি।
মন্ত্রী বলেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে তারা সব মিলিয়ে ২০০ কর্মদিবস শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে। অবস্থা স্বাভাবিক থাকলে ৩৩০ কর্মদিবস শ্রেণি কার্যক্রম হতো।
এই পরীক্ষার্থীরা ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে উত্তীর্ণ হয়েছে। এ অবস্থায় ২০২৩ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষা ২০২২ সালের পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ১৮০ কর্মদিবসের পাঠ্যসূচি অনুসারে অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ বছর জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানান মন্ত্রী। মহামারির কারণে গত দুই বছর অষ্টম শ্রেণির এ সমাপনী পরীক্ষা হয়নি।
সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে মাধ্যমিক ও এপ্রিলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে এলেও মহামারি সেই সূচি পাল্টে দিয়েছে।
২০২০ সালে কভিড সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই এসএসসির পরীক্ষা নিতে পেরেছিল সরকার। পরে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সে বছর আর এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া যায়নি। তার বদলে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন ফল দেয়া হয়।
২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষা ১৯ জুন থেকে ও এইচএসসি পরীক্ষা ২২ আগস্ট থেকে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এবারও সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা হবে না।