নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্যার কারণে স্থগিত হওয়া এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এসএসসি শুরুর দেড় মাস পর নভেম্বরের শুরুতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা শুরু করতে পারব। বোর্ডগুলো শিগগিরই পরীক্ষার সময়সূচি জানিয়ে দেবে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গত এলাকায় ১ লাখ ২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীর বই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসব শিক্ষার্থীর জন্য আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন পাঠ্যবই পাঠানো হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণি ও ভোকেশনাল স্তরে সিলেটে ১৪ হাজার ৭৭৯ ও সুনামগঞ্জে ৪২ হাজার ৭৫৫ সেট; এসএসসি ও দাখিলে ২০২২ সালের পরীক্ষার্থীদের সিলেটে ৬৮২ ও সুনামগঞ্জে ১০ হাজার ৫৮৬ সেট; ইবতেদায়ি ও দাখিলে ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির সিলেটে ১০ হাজার ১৪০ ও সুনামগঞ্জে ২৩ হাজার ৫৫৮ সেট বিতরণ করা হবে। সেই হিসাবে সিলেটে মোট ২৫ হাজার ৬১০ ও সুনামগঞ্জে ৭৬ হাজার ৮৯৯ সেট বই পাঠানো হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং নরসিংদী জেলার উদ্বৃত্ত বই সিলেট ও সুনামগঞ্জে পাঠানো হচ্ছে।
মহামারির কারণে পিছিয়ে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা এবার ১৯ জুন শুরু করে ৬ জুলাই শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি সময়ে প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে সিলেট অঞ্চল এবং উত্তরের কয়েকটি জেলায় ব্যাপক বন্যা দেখা দিলে সরকার ১৭ জুন পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
সারা দেশে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়ার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু বন্যাদুর্গত এলাকায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও ক্ষতি হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২৪ তারিখের মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বই পাঠিয়ে দিতে পারব। সে হিসেবে অগাস্টের মাঝামাঝি পরীক্ষা নেয়ার পরীকল্পনা ছিল, কিন্তু অগাস্টে আবার বন্যা হওয়ার একটা আশঙ্কা আছে, তাই আমরা সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে এইচএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করব। এর ছয় সপ্তাহ পর, অর্থাৎ নভেম্বরের শুরুতে আমরা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করব।
জুনের মাঝামাঝি এসএসসি পরীক্ষা শুরু করার পর ২২ আগস্ট থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর পরিকল্পনা করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এসএসসি পিছিয়ে যাওয়ায় এইচএসসিও হবে নতুন সূচিতে।
পুনর্বিন্যস্ত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী এবার এসএসসিতে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং বিজ্ঞান-এই তিন বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হবে না। এ বিষয়গুলোর নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। আর এইচএসসিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষা না নিয়ে তা সবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নম্বর দেয়া হবে।
বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা, ভূগোল ও পরিবেশ, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, অর্থনীতি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান এবং কৃষি শিক্ষাÑএই বিষয়গুলোতে এবার পরীক্ষা হবে এসএসসিতে। আর এইচএসসিতে পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজি ও গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয় এবং একটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পুনর্বিন্যস্ত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী।
এসএসসি ও এইচএসসিতে ২ ঘণ্টার পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের জন্য ২০ মিনিট এবং রচনামূলক প্রশ্নের জন্য ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় থাকবে এবার। বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র- এই বিষয়গুলোতে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক আছে, সেগুলোতে ৪৫ নম্বরের (রচনামূলক ৩০ ও নৈর্ব্যক্তিক ১৫ নম্বর) এবং ব্যবহারিক না থাকলে ৫৫ নম্বরের (রচনামূলক ৪০ ও নৈর্ব্যক্তিক ১৫) পরীক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের।
অন্যদের মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।