এসএ গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি নিলামে তুলছে ইসলামী ব্যাংক

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক শাহাবুদ্দীন আলমের মালিকাধীন এসএ গ্রুপের তিন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি নিলামে তুলছে ইসলামী ব্যাংক। এ তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির গত ৪ অক্টোবর পর্যন্ত অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ৫৭৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এজন্য শ্যারিজা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, কামাল ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ও শ্যারিজা নেভিগেশন লিমিটেডের মেশিনারিজের জাহাজ ও দুই দশমিক ৪৪ একর জমি নিলামে তোলা হচ্ছে। আগামী ২৬ অক্টোবর এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।
ব্যাংক ও গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য, পেপার, তেল রিফাইনারি এবং আবাসন ব্যবসা পরিচালনা করছে চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক শাহাবুদ্দীন আলম। তার মালিকাধীন এসএ গ্রুপের ১৭টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম এসএ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, শামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেড, সাউথ ইস্টার্ন অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, শ্যারিজা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, কামাল ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ও শ্যারিজা নেভিগেশন লিমিটেড। বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন সময় একাধিক সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠান তিনটি। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড একটি। এ ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ২০০৪ সালে অক্টোবর মাসে শ্যারিজা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, কামাল ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ও শ্যারিজা নেভিগেশন লিমিটেডের নামে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে। এ ঋণ কিছুটা পরিশোধিত হলেও পরে ঋণের বিভিন্ন কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
গত ৪ অক্টোবর পর্যন্ত শ্যারিজা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের কাছে ইসলামি ব্যাংকের পাওনা সুদ ও আসল মিলে ৪১৭ কোটি ৮৪ লাখ ৭৬ হাজার ৯৯৪ টাকা, কামাল ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের কাছে ১৫৩ কোটি ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৪২৭ টাকা ও শ্যারিজা নেভিগেশন লিমিটেডের কাছে দুই কোটি ৭৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯০ টাকা। অর্থাৎ এ তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির গত চার অক্টোবর পর্যন্ত অনাদায়ে ঋণের পরিমাণ হয়েছে ৫৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। এ পাওনা পরিশোধে বেশ কয়েকবার তাগাদা দেওয়া হয় এ ব্যবসায়ীকে। কিন্তু পরিশোধে প্রতিবারই ব্যর্থ হন ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দীন আলম। ফলে ব্যাংক প্রায় ৫৭৪ কোটি আদায়ে তিন প্রতিষ্ঠানের সব মেশিনারিজ, জাহাজ ও দুই দশমিক ৪৪ একর জমি নিলামে তুলেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, যা আগামী ২৬ অক্টোরব প্রকাশ্যে বিক্রির জন্য তারিখ নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এরই মধ্য বন্ধকি সম্পত্তির নিলামের মাধ্যমে বিক্রির নোটিশ প্রচার করে ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এভিপি ও আগ্রাবাদ শাখায় কর্মরত সৈয়দ মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চলতি মাসে ৪ তারিখ পর্যন্ত শ্যারিজা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের কাছে সুদ ও আসল মিলে ৪১৭ কোটি ৮৪ লাখ ৭৬ হাজার ৯৯৪ টাকা, কামাল ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের কাছে ১৫৩ কোটি ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৪২৭ টাকা ও শ্যারিজা নেভিগেশন লিমিটেডের কাছে দুই কোটি ৭৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯০ টাকা পাওনা রয়েছে। অর্থাৎ এ গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে অনাদায়ে ঋণের পরিমাণ হয়েছে ৫৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। এ পাওনা পরিশোধে বেশ কয়েকবার তাগাদা দেওয়া হয় এ ব্যবসায়ীকে। কিন্তু পরিশোধে ব্যর্থ হন ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দীন আলম। ফলে আমরা নিয়মানুসারে নিলাম প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি। তবে এসএ গ্রুপ চেষ্টা করছে রি-শিডিউলের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধে। যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা আইনি প্রক্রিয়া অগ্রসর হব।’
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক মন্দা বিবেচনায় বড় ঋণ পুনর্গঠনে বিশেষ সুবিধা নেয় এসএ গ্রুপের মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠান এসএ অয়েল রিফাইনারি ও শামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেড। মাত্র এক শতাংশ ডাউনপেমেন্টে প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯২৮ কোটি টাকা পুনর্গঠন করে ছয়টি ব্যাংক। পুনর্গঠিত ঋণের কিস্তি দেওয়ার সময় পার হলেও পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হন বলে জানান ব্যাংক এশিয়া, রূপালী ব্যাংকসহ আরও বেশ কিছু আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ব্যাংক এশিয়ার এলসির প্রয়োজনীয় কাগজ জালিয়াতি পাশাপাশি আরও বেশ কিছু ব্যাংককে দেওয়া চেক ডিজ-অনার হওয়ার কারণে মামলা করা হয় এ গ্রুপের কর্ণধারদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের জজ আদালতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসএ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক শাহাবুদ্দীন আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক তো অর্থ পরিশোধে তিনবার তিন রকমের নোটিশ প্রদান করলেও এবার বিশেষ মহলের চাপে পড়ে আমাদের বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রির নোটিশ জারি করেছে। আর ব্যাংক এশিয়া যে কাজ করেছে, তা লজ্জাজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘একসময় আমাদের অবস্থান ভালো ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে বাজার ধসের কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ি। ফলে অনেক লোকসানের সম্মুখীন হয়। আর এজন্য আমাদের বিভিন্ন ব্যাংকে পাওনা বেড়ে যায়। আর পুনর্গঠন করা ঋণ পরিশোধের প্রথম শর্ত ছিল ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে ব্যাংকগুলো পুনরায় অর্থায়ন করবে। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক তা না করায় ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে ঋণ পরিশোধে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আর ঘুরে দাঁড়াতে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০