নিজস্ব প্রতিবেদক:এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম কাজীর দেউড়ী শাখা থেকে ৮ দশমিক ৬ মেট্রিক টন চোরাই কাপড় জব্দ করা হয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে এসব কাপড় জব্দ করেছেন। চোরাচালানের দায়ে মো. নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় গতকাল রোববার একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক উত্তম চাকমার সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের এসএ পরিবহনের কাজীর দেউড়ী শাখায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়। কাভার্ড ভ্যানটি সিলগালা অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে সিলগালা খুলে ৩৫৬টি প্যাকেজে (১২৮টি বস্তা ও ২২৮টি রোল) সাদা, সাদা প্রিন্ট, হলুদ, জলপাই, হালকা বেগুনিসহ ৮টি ভিন্ন রঙের ৮৬১২ দশমিক ৭৯ কেজি নিট ফেব্রিকস পাওয়া যায়। কিন্তু আটককৃত পণ্যের মালিকানা দাবিকারী মো. নজরুল ইসলামের উপস্থাপিত দলিলাদি ও কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৫ ডিসম্বের অনুষ্ঠিত নিলামের মাধমে নজরুল ইসলামের অনুকূলে শুধু ঈযধৎপড়ধষ ঐবধঃযবৎ রঙের ১০ হাজার ৬৯৪ দশমিক ৩৪ কেজি ৩৫৪ রোল ঘুষড়হ ঝঢ়ধহফবী গরী ঋধনৎরপং নিলামে বিক্রি করা হয়। নিলাম করা পণ্যগুলো গঈঈ গঊউঅঘ নামক জাহাজের মাধ্যমে ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আমদানি করা হলেও জব্দ তালিকা তৈরিকালে ২০২২ সালের বিভিন্ন তারিখের স্টিকার যুক্ত নিট ফেব্রিকস পাওয়া যায়। যাতে প্রমাণিত হয় পণ্যের দাবিদার প্রদর্শিত দলিলাদিতে উল্লিখিত পণ্য ও জব্দ পণ্য এক নয়। তাছাড়া পণ্যচালানের সঙ্গে মূসক চালানও পাওয়া যায়নি। জব্দ নিট ফেব্রিকসের পরিমাণ ৮ হাজার ৬১২ দশমিক ৭৯ কেজি এবং শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ২ কোটি ৭৪ লাখ ৭ হাজার ৯৯ দশমিক ৩২ টাকা। নিট ফেব্রিকসের সঙ্গে জড়িত শুল্ক-করাদির পরিমাণ ২৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৮ টাকা।
আরও বলা হয়, গোয়েন্দা দলের নজরদারিতে রাখা কাভার্ড ভ্যানটি রাত ৮টা ৪০ মিনিটে কর্ণফুলী থানার চরলক্ষা ইউনিয়নের চরলক্ষা এলাকার একটি গার্মেন্ট গুদাম থেকে নিট ফেব্রিকস লোড করে রাত ৯টার দিকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাশ থেকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় পৌঁছায়। টোল প্লাজার সিসিটিভি ক্যামেরায় ট্রাকটি ৯টার দিকে টোল প্লাজা অতিক্রমের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কাজীর দেউড়ী আসে। কাস্টমস গোয়েন্দা দলের উপস্থিতি টের পেয়ে কাভার্ড ভ্যানের চালক কাভার্ড ভ্যানটি এস এ পরিবহনের কাজীর দেউড়ী অফিস প্রাঙ্গণে প্রবেশ করান। কাভার্ড ভ্যানের চালকের লিখিত বিবৃতি অনুযায়ী পণ্যচালানটি চরলক্ষা নামক স্থানে অবস্থিত একটি গার্মেন্ট গুদাম থেকে নিট ফেব্রিকস লোড করা হয়। পণ্যচালান পরিবহনের পক্ষে দলিলাদি প্রদর্শনের অনুরোধ জানালে গাড়িচালক পণ্য চালানটির আমদানি সংক্রান্ত কোনো দলিলাদি বা বিক্রয় সংক্রান্ত দলিলাদি (মূসক চালান ৬.৩) দাখিল করতে সক্ষম হননি। পরে এস এ পরিবহন কর্তৃপক্ষের খাতুনগঞ্জ শাখার ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান বুকিং চালান উপস্থাপন করেন। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, কাভার্ড ভ্যানটি টেরি বাজার থেকে লোড করা হয়নি এবং এসএ পরিবহনের খাতুনগঞ্জ ব্রাঞ্চ থেকে বুকিং করা হয়নি। উপস্থাপিত এসএ পরিবহনের খাতুনগঞ্জ শাখার বুকিং চালানের মাধ্যমে ৫৫ হাজার টাকা ভাড়া-সংবলিত বুকিং চালান দেয়া হয়। চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা ভাড়ায় প্রচলিত কাভার্ড ভ্যানে পরিবহন না করে এসএ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ৫৫ হাজার টাকা ভাড়ায় পরিবহনের বিষয়টি শুধু অস্বাভাবিক নয়, এতে সংশ্লিষ্টদের অসৎ উদ্দেশ্য সুস্পষ্টভাবে অনুধাবনযোগ্য। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা কাঁচামাল অবৈধ অপসারণপূর্বক চোরাচালানের অভিযোগের সত্যতাই প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পণ্যচালান আটকের স্থানে চোরাচালানবিরোধী সরকারি কার্যক্রমে বাধাদানের উদ্দেশ্যে এসএ পরিবহনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সরকারি কাজে বাধা দেন। তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণসহ প্রাণনাশের ভয়ভীতি ও মারমুখী হয়ে ঘেরাওপূর্বক উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানমালের নিরাপত্তার শঙ্কা তৈরি হয়।