নিজস্ব প্রতিবেদক: সড়কের ঘনত্বের দিক থেকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে বাংলাদেশ। তবে উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় এ দেশে পাকা সড়ক অনেক কম। রেল অবকাঠামোতেও একই অবস্থা। আর আকাশপথে পণ্য পরিবহনে অবস্থা আরও খারাপ। এছাড়া বিদ্যুৎ, বন্দর অবকাঠামো ইত্যাদি ক্ষেত্রেও অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এজন্য বিশেষ উন্নয়ন প্রয়োজন। আর তা করা গেলে ১৫ বছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২৩৬ লাখ কোটি টাকা বাড়বে।
ইউনাইটেড ন্যাশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (ইউএন-এসকাপ) প্রকাশিত ‘এশিয়া-প্যাসিফিক কান্ট্রিজ উইথ স্পেশাল নিডস ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) সঙ্গে গতকাল যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ইউএন-এসকাপ।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে সড়ক রয়েছে গড়ে প্রায় দুই হাজার ৪০০ কিলোমিটার। তবে দেশের মোট সড়কের মাত্র ১০ শতাংশ পাকা। তবে দেশের রেল অবকাঠামো সড়কের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। প্রতি হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে রেলপথ রয়েছে গড়ে ২৪ কিলোমিটার। আর বর্তমানে দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আছে। আর প্রায় ছয় কোটি মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত। এছাড়া বিদ্যুতের মাথাপিছু ব্যবহার অনেক কম।
এদিকে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৬৫ জন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতি ১০০ জনে মাত্র ১২ জন। তবে ফিক্সড ফোন ব্যবহারকারী অনেক কম। ১০০ জনে মাত্র দুজন এটি ব্যবহার করে। তবে সব মিলিয়ে অবকাঠামো সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছে। এক্ষেত্রে ৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৮। আর স্কোর একের মধ্যে দশমিক ২৭৭।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পরিবহন সূচকে বাংলাদেশ সবার ওপরে রয়েছে। তবে জ্বালানি সূচকে তলানির কাছাকাছি বাংলাদেশের অবস্থান। একই অবস্থা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সূচকেও। এগুলো উন্নত করা গেলে ২০১৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের জিডিপি বাড়বে দুই হাজার ৯৫০ কোটি ডলার বা ২৩৬ লাখ কোটি টাকা। তবে কোনো কারণে আশানুরূপ ফল না পেলেও কমপক্ষে দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলার জিডিপি বাড়বে ১৫ বছরে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ইউএন-এসকাপের অর্থনীতিবিদ ড. সুদিপ রনজন বসু। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য পরিবহন, জ্বালানি, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণে কর আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
প্রধান অতিথি হিসেবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে যেমন সহজে কানেক্টিভিটির সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, অন্যদিকে ভূমিস্বল্পতার কারণে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আগে রফতানিতে প্রথম ছিল পাটপণ্য, এখন প্রথম হচ্ছে তৈরি পোশাক। একদিকে জায়গা কম অপরদিকে জনসংখ্যা বেশি যার কারণে মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান দিতেও সমস্যা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর অনেক বড় কিন্তু আমাদের দেশে বেশি আমদানি-রফতানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপাসিটি কমে যাচ্ছে। কারণ সব কিছু আমদানি-রফতানি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় প্রকল্প তৈরি করতে হবে। ভূ-রাজনীতির কারণে প্রকল্পগুলোয় কাজের মান ভালো হয় না তাতে করে সরকারের ব্যয় বাড়ে। প্রকল্পগুলোতে কেমন ব্যয় হচ্ছে, গুণগত মান কেমন হচ্ছে সেগুলো সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং ব্যয় কমাতে হবে।
Add Comment