Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:17 pm

এসডিজির অগ্রগতি: চলতি মাসেই জাতিসংঘে প্রতিবেদন দেবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশ সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এরই মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে সবধরনের নীতি প্রণয়ন করেছে। আগামী ১৫ জুন জাতিসংঘে এ সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন (ভিএনআর) দাখিল করা হবে। তবে তথ্যের ঘাটতি, কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। অভীষ্ট অর্জনের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে দেড় লাখ কোটি ডলার।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) উদ্যোগে ভিএনআর প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। জাতিসংঘে দাখিলের আগে গতকাল বুধবার তা দেশের সরকারি ও বেসরকারি

বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শের জন্য উপস্থাপন করা হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক সভায় এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের (জিইডির) সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।

পরিকল্পনামন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সম্পূর্ণভাবে এসডিজির প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। আর সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোনো প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয় না। গত বছর ২১২টি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮টিই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও এসডিজির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এভাবেই বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়নের সঙ্গে জাতীয়ভাবে অগ্রসর হচ্ছে।

মূল উপস্থাপনায় ড. শামসুল আলম বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য নীতি, তথ্য ও তত্ত্বাবধান এখন প্রধান কাজ। তবে পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশের। দুই শতাধিক বিষয়ের মধ্যে মাত্র ৭০টি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ তথ্য থাকলেও অন্তত ৬৩টি বিষয়ের কোনো তথ্যই নেই বাংলাদেশের হাতে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবেদনে ২০১০ সালের তথ্য উল্লেখ করেছি। কারণ হালনাগাদকৃত তথ্য আমাদের কাছে নেই।

সভায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এসডিজি-সেলের মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

সভায় বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি নামের যে বৈশ্বিক উন্নয়ন অভীষ্ট গ্রহণ করা হয়েছে তার ওপর বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। গত বছর ২৩টি দেশ নিজ উদ্যোগে এ সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন (ভিএনআর) দাখিল করে। ওই বছর বাংলাদেশের এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুত ছিল না। তবে এ বছর বাংলাদেশ এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। এ বছর মোট ৪৪টি দেশ ভিএনআর দাখিল করবে জাতিসংঘে। এ মাসের ১০ থেকে ১৯ জুন সময়ের মধ্যে এসব প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। বাংলাদেশ আগামী ১৫ জুন এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। এ বছর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ভারত, আফগানিস্তান ও নেপালও তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।

বিশ্বব্যাপী এসডিজিতে মোট ১৭টি অভীষ্ট থাকলেও এবারের প্রতিবেদনে সাতটি অভীষ্টকে কেন্দ্র করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে ওই সাতটি অভীষ্ট নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। সেসব বিষয় সংক্রান্ত বাংলাদেশি প্রতিবেদনে বলা হয়, যথেষ্ট অগ্রগতি থাকলেও বেশ কিছু বিষয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জাতীয় আয়ের (জিডিপি) ১৬ শতাংশ রাজস্ব আয় করতে হবে বাংলাদেশকে যা এখন রয়েছে মাত্র ১২ শতাংশের মতো। এ ছাড়া গবেষণা, প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে বাংলাদেশের। অর্থায়নের ক্ষেত্রে ১৩ বছরের কর্মপরিকল্পনায় মোট দেড় ট্রিলিয়ন ডলার খরচের প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবছর প্রয়োজন হবে ১৫ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে বার্ষিক তিন দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার আসবে সাধারণ বিদেশি সহায়তা (ওডিএ) থেকে। বাকি অর্থায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ সূত্রের দিকেও গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।