Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 5:08 am

এসডিজির আওতায় আনতে দলিত জনগোষ্ঠীর তথ্য জানা জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক: টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের জন্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশেষ নীতি গ্রহণ করা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশে বসবাসরত বিপুলসংখ্যক দলিত জনগোষ্ঠীর সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্যও নেই সরকারের কাছে। বিভিন্ন হিসাবে প্রায় ৬০ লাখ দলিত জনগোষ্ঠী রয়েছে বাংলাদেশে। এদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে একটি শুমারি করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এসডিজির বিভিন্ন অভীষ্টের সঙ্গে যুক্ত করে এ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মসহ বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে যৌথভাবে আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘এসডিজির আলোকে বাংলাদেশে দলিত জনগোষ্ঠীর অবস্থান’ শীর্ষক সংলাপে সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সচিব অধ্যাপক শামসুল আলম এতে বক্তব্য রাখেন।

সভায় বক্তারা বলেন, এসডিজির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সবার জন্য উন্নয়ন। এজন্য হরিজন ও দলিত সম্প্রদায়ের জন্য সাংবিধানিক ও আইনি অঙ্গীকার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। অনেক দিন ধরেই বৈষম্যবিরোধী আইন পাসের জন্য দাবি করা হলেও তা এখনও হয়নি। আইনের খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদে আটকে আছে, এটা দ্রুত পাস হওয়া প্রয়োজন।

সভায় অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, এসডিজির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নয়নের জন্য কেউ পিছে পড়ে থাকবে না। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক টার্গেট নির্ধারণ করে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। আমরা এমডিজির সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এসডিজিতেও সাফল্য অর্জন করতে পারব। এজন্য তথ্য সংগ্রহ একটি বড় বিষয়। সরকারিভাবে তথ্য পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

সংলাপের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের প্রধান মেঘনা গুহ ঠাকুরতা। তিনি তার প্রবন্ধে বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হরিজন, ঋষি, মুচি, শব্দকর, রবিদাস, কাওড়া, বুনো, কর্তাভজা, ভগবজ্জন, ভগবনিয়া, জেলে, শিকারি, নিকারি প্রভৃতি নামে-উপনামে বসবাস করছে প্রায় ৬০ লাখ দলিত জনসংখ্যা বসবাস করছে। কিন্তু পরিসংখ্যান ব্যুরোর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণের জন্য একটি শুমারি করা খুবই প্রয়োজন।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, দলিত জনগোষ্ঠী হোটেল, সেলুন, রেস্তোরাঁ, ধর্মীয় স্থানে প্রবেশাধিকার পায় না। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না। শিক্ষা, চাকরি ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। সরকারি সেবা ও তথ্যের প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। এছাড়া নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয় তারা সর্বাধিক। এদিকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দলিতদের পাশাপাশি বৃহত্তর সমাজেই নিম্নমান বিরাজ করছে।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, এসডিজির সুনির্দিষ্ট কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে দলিতদের এ প্রয়োজনগুলো জড়িত। অভীষ্ট এক, তিন, চারের আওতায় তাদের শিক্ষা, দারিদ্র্য ও সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে ভ‚মিকা নেওয়া জরুরি। অভীষ্ট পাঁচের আওতায় লিঙ্গবৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। সার্বিকভাবে এসব অগ্রগতির জন্য সরকার-বেসরকারি সংস্থা ও দলিত জনগোষ্ঠীর সবার অংশগ্রহণে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সভায় সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য অ্যারোমা দত্ত, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন, অধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেনসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা বক্তব্য ও মতামত ব্যক্ত করেন।

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন বলেন, দলিতদের জন্য নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। দলিতরা এখন গ্রামে থাকে না। আবার নগরেও তাদের স্থায়ী আবাসন নেই। সরকার চাকরিজীবী দলিতদের আবাসন করার কথা বলেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে চাকরিজীবীরা অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করছেন। মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য অ্যারোমা দত্ত বলেন, দলিতদের জীবনযাত্রার ওপর ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তি আসার ফলে এখন আর পুরোনো কাজগুলোর জনপ্রিয়তা নেই। এখন তাদের সন্তানরা কী করবে, তা ভাবা দরকার।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসডিজির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা। সরকার এর অর্থ করছে, ‘কেউ পিছিয়ে থাকবে না’। আমরা নাগরিক প্ল্যাটফরম থেকে এর অর্থ করেছি, ‘কাউকে পেছনে রাখা যাবে না।’ সরকারি নীতির মাধ্যমেই পিছিয়ে পড়াদের এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য মূল জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বৃদ্ধিও দরকার। আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হব। তারপরও এখানে দলিত সমস্যা থাকবে, বঞ্চিত জনগোষ্ঠী থাকবে, এটা হতে পারে না। প্রযুক্তির যুগে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের বিষয়েও নজর দেওয়া দরকার বলে তিনি মত দেন। বক্তারা আরও বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ বিভিন্ন পদে চাকরির জন্য তাদের কোটা ছিল। কিন্তু এখন সেই পদগুলোয় প্রধান জনগোষ্ঠীর সদস্যরা চাকরি নিয়ে নিচ্ছেন। পরে তারা কন্ট্রাক্টে দলিতদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এতে দলিতরা অনিশ্চয়তায় পড়ছে।