এসডিজি অর্জনে অংশীদারির গুরুত্ব

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত সহস াব্দ উন্নয়ন  লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশ ও জাতির  ভাবমূর্তি  বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছে। বাস্তবিক অর্থে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান কিছুটা উন্নত হয়েছে।

উন্নয়নের সুফল ভোগকারী গোষ্ঠীই হলো অংশীজন। তা হতে পারে কোনো একটি নির্দিষ্ট সমাজ কিংবা কোনো একটি নির্দিষ্ট জাতি কিংবা গোটা বিশ্ব। আর এই অংশীজনরা যদি কোনো উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে চায় তাহলে তাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। আর এই দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে হয়। অংশীজনের এই দায়িত্ব ও কর্তব্যকে  অংশীদারিত্ব বলে। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি, যেকোনো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিংবা যেকোনো উন্নয়নে অংশীদারির গুরুত্ব অপরিসীম। অতএব টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে  জনদের অংশীদারিত্ব মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের জন্য এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। কেননা আমাদের দেশের জনগণ নিজেদের ব্যাপারে তেমন সচেতন নয়। আর এই অসচেতনতায় হলো আমাদের  টেকসই উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধক। উদাহরণ হিসেবে  এসডিজির ছয় নম্বর লক্ষমাত্রা নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন এর কথাই ধরি। আমাদের দেশের বিভিন্ন মানুষ যে পরিমাণ পানির অপচয় করে তা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে তেমন দেখা যায় না। আবার আমাদের দেশে কিছু কিছু অঞ্চলে সুপেয় পানির অনেক ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। রাজধানী ঢাকা শহরের পানির লাইনে কখনও পানি থাকে, কখনও থাকে না। পানি কেমন বর্ণ ও গন্ধ যুক্ত। গ্লাসে কিছুক্ষণ রেখে দিলে তলানি জমা হয়। এক্ষেত্রে বলা চলে আমাদের যথেষ্ট অসচেতনতার কারণে  সৃষ্টি হয়েছে পানির ঘাটতি।  আমরা যেভাবে বুড়িগঙ্গা দূষিত করছি বা খালবিল ভরাট করে বসতি স্থাপন করছি তা অশনিসংকেত বটে। শহরাঞ্চলে যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে তার ফলাফল তো আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আংশিক বৃষ্টি হলে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় তা গণমাধ্যমে প্রায়ই উঠে আসে। মফস্বল শহরেও এমন জলবদ্ধতা আছে। মনে আছে, জলাবদ্ধতার কারণে  ময়মনসিংহ শহরে গুলকিবাড়ি গলির ছোট রাস্তায় বুক সমান পানি জমেছিল। শহরের প্রতিটি গলির অবস্থা এমন। আর এখানেও তো মানুষ বসবাস বা চলাচল করে। এটা স্বীকার করতে হবে, এমন সমস্যা সৃষ্টির পেছনে নগরবাসীই দায়ী। নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে জাতিসংঘ ঘোষিত ষষ্ঠ লক্ষ্যটি হলো নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন। সরকার নাগরিকদের  নির্দেশনা বা পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে পারে। আর এসব নির্দেশনা মেনে চলা ও বিভিন্ন সম্পদের সংরক্ষণ করার দায়িত্ব তো নাগরিকদেরই। শুধু ব্যক্তিগত লাভের কথা চিন্তা না করে সামগ্রিকভাবে সমষ্টিগত উপকারিতা কীভাবে আসবে সেটা চিন্তা করাও একধরনের অংশীদারির পর্যায়ে পড়ে। ব্যক্তির স্বার্থ যেখানে দেখা হয় সেখানে সামাজিক-সমষ্টির স্বার্থ  অর্জন অসম্ভব। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রের সব নির্দেশনা ও সম্পদ কোনো ব্যক্তির একার নয়। এটা সামগ্রিকভাবে প্রতিটি নাগরিকের ওপরেই ন্যস্ত। আমরা যত্নবান ও দায়িত্বশীল হলেই এসডিজি অতি সহজে অর্জন করতে পারব।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এবারের সূচকে ভুটানের অবস্থা সবচেয়ে ভালো। ৬৯.৯৮ স্কোর নিয়ে হিমালয়ের এ দেশটির অবস্থান সূচকের ৭৫ নম্বরে। এছাড়া ৬৯.২৭ স্কোর নিয়ে মালদ্বীপ ৭৯তম, ৬৮.১০ স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কা ৮৭তম, ৬৬.৫২ স্কোর নিয়ে নেপাল  ৯৬তম, ৬৪.৯৫ স্কোর নিয়ে মিয়ানমার ১০১তম অবস্থানে আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে তিন দেশ। ৬০.০৭ স্কোর নিয়ে ভারত সূচকের ১২০তম, ৫৭.৭২ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ১২৯তম এবং ৫৩.৯৩ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান ১৩৭তম অবস্থানে রয়েছে।

একটি উন্নত দেশ কীভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করছে,  তা আমরা পর্যবেক্ষণে রাখতে পারি। এ বিষয় থেকে শিক্ষা নিতে পারি এবং তা আমাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে। কী কারণে কোনো দেশ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, তা থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি।

শেখ সায়মন পারভেজ  হিমেল

শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০