মাসুম বিল্লাহ: টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বা এসডিজি হচ্ছে জাতিসংঘ ঘোষিত একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা। যে এজেন্ডায় ২০৩০ সাল নাগাদ এমন একটি সমাজ ব্যবস্থার কথা কল্পনা করা হয়েছে যে সমাজ ব্যবস্থায় উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে কোনো মানুষ পিছিয়ে থাকবে না। সমাজে হ্রাস পাবে আয় ও সম্পদের বৈষম্য, নিশ্চিত হবে ন্যায়বিচার, থাকবে না ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, মানুষ দক্ষতা অর্জন ও আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহƒত হবে টেকসই উপায়ে, স্থলজ ও জলজ প্রাণীর স্বাভাবিক চলাচল হবে নির্বিঘ্ন ও পরিবেশের সুরক্ষার বিষয় পাবে সর্বাধিক অগ্রাধিকার। এসব বিষয় অর্জনের জন্য যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে সেটিকে একত্রিতভাবে ‘সমগ্র সমাজ পদক্ষেপ’ বা হোল অব সোসাইটি অ্যাপ্রোচ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে এসডিজির সাত বছর অতিবাহিত হয়েছ। সামনে সময় আছে আর মাত্র আট বছর। কিন্তু অর্জনে বাকি রয়েছে আরও অনেক কিছু। এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মাঝ পথে তাই একটি মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন বৈকি। যদিও সরকারের তরফ থেকে নানা সময়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে, কিন্তু যেসব পর্যালোচনা থেকে এসডিজি অর্জন প্রক্রিয়ার কংক্রিট ধারণা এখনও পাওয়া যায়নি। এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আগামী আট বছরে বাংলাদেশকে কী কী মাইলস্টোন স্পর্শ করতে হবে, সে বিষয়ে একটি ধারণা রয়েছে। আগামী আট বছরে সেসব অর্জন করা মাইলস্টোন কতটা সম্ভবপর হবে, তা নিয়ে নানা সংশয় রয়েছে।
এসডিজি অর্জনে একটি সমগ্র সমাজ পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই সমগ্র সমাজ পদক্ষেপ কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সমগ্র সমাজ বলতে কেবল সরকারি উদ্যোগ নয়, এসডিজি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধিদের। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত যতগুলো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেখানে সমাজের প্রতিটি স্তরের প্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্ব কতটা নিশ্চিত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এসডিজি অর্জন তরান্বিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে কর্মবণ্টন করে একটি এসডিজি ম্যাপিং করেছে। সেখানে এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে কোনটি অর্জনে কোন মন্ত্রণালয় মূল দায়িত্ব পালন করবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু বণ্টিত এ দায়িত্ব কতটা পালিত হচ্ছে, তা নিয়ে নিয়মিত ভিত্তিতে কোনো মূল্যায়ন পাওয়া যাচ্ছে না। কেননা, দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়গুলো এসডিজি অর্জনের বিষয়ে বছরান্তে কোনো মূল্যায়ন করে না। আবার পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীনে একটি এসডিজি ট্রাকার চালু করা হলেও তাতে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায় না। কাজেই অর্পিত দায়িত্ব পালনে একটি মন্ত্রণালয় কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে আছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া কঠিন। তবে এসডিজি অর্জনের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য প্রতি দুই বছর অন্তর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতি তিন বছর অন্তর স্বপ্রণোদিত জাতীয় পর্যালোচনা প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২০২০ সালে সর্বশেষ অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছিল। সেই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কিছু লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্রে সন্তোষজনক অগ্রগতি পাওয়া গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। যে কারণে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থানও খুব বেশি দৃঢ় এখনও নয়। জাতিসংঘের সর্বশেষ মূল্যায়ন অনুযায়ী, সংস্থাটি ১৬৬টি দেশের এসডিজি অর্জন পরিক্রমা পর্যালোচনা করেছে। তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। অথচ এর আগে যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি ঘোষণা করেছিল জাতিসংঘ, সেই এমডিজি অর্জনে প্রথম সারিতে ছিল বাংলাদেশ। সেই বিবেচনায় এসডিজি অর্জনেও বাংলাদেশ প্রথম দিকে থাকবে বলেই সবার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক উদ্যোগের
বিষয়ে বাংলাদেশ এখনও জোরালো পদক্ষেপই নিতে পারেনি। এসডিজি পরিমাপের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখনও বড় বমস্যা উপাত্তের ঘাটতি।
২০২০ সালে এসডিজি অর্জনের বিষয়ে দ্বিতীয় অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট: বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২০’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মোট ২৪২ সূচকের মধ্যে প্রায় ৭১ শতাংশ বা ১৭১ সূচকের তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে ৬৩টি সূচকের কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। বাকি ১০৮ সূচকের যেসব তথ্য-উপাত্ত আছে, সেগুলো পরিমার্জন ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। আর যথাযথ তথ্য-উপাত্ত মিলেছে ৭০টি সূচকের। এমন পরিস্থিতিতে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতিই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে এখনও চিহ্নিত হয়ে আছে। তথ্য-উপাত্তের এ ঘাটতি ২০১৬-১৭ সময়েই চিহ্নিত হয়েছিল। আর তখন থেকেই তথ্য-উপাত্ত প্রণয়নের জন্য প্রধানত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) তাগাদা দিয়ে আসছে সরকার। এখন পর্যন্ত এসডিজি অর্জনকালের সাত বছর অতিবাহিত হতে চললেও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি এখনও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। কাজেই, এসডিজি অর্জনে আংশিক কিছু সূচকের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া গেলেও সামগ্রিক সূচকের বিষয়ে পুরো অগ্রগতির চিত্র বোঝা সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেটি হলো অর্থায়ন চ্যালেঞ্জ। ২০১৭ সালে এ বিষয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে জিইডি। সেই সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, এসডিজি অর্জনের জন্য ২০১৭ সালের পর থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ সরকারের নিয়মতান্ত্রিক বাজেট প্রক্রিয়ার বাইরে অতিরিক্ত আরও ৯২৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ৬৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। যে অর্থায়নের উৎস হিসেবে প্রধানত তিনটি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এগুলো হলোÑসরকারের নিজস্ব উৎস, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগী বা বৈদেশিক উৎস। এসডিজিকে যেহেতু টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, সে জন্য সদস্য দেশগুলোকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই অর্থের সংস্থান বাড়ানোর বিষয়ে বেশি তাগিদ দেয়া হয়েছে। সে কারণে অর্থায়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দেশীয় উৎসকেই প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ৯২৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৮৫ শতাংশই দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধিারণ করা হয়েছিল এসডিজি অর্থায়ন পরিকল্পনায়। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সে কারণে বেসরকারি খাতকে অর্থায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। ৯২৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৪২ শতাংশই বেসরকারি উৎস থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসডিজি অর্জনে সরাসরি কী পরিমাণ বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান সরকারের কোনো দপ্তর থেকে পাওয়া যায় না। তবে সাধারণ ধারণা হচ্ছে, বেসরকারি খাত মুনাফার নিশ্চিয়তা না পাওয়া পর্যন্ত কোনো খাতে বিনিয়োগ করতে চাই না। অতীতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে যেসব বেসরকারি বিনিয়োগ এসেছে, সেখানে আইন ও নীতিমালার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতে এমনটি দেখা গেছে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে। আইনি দায়মুক্তি দিয়ে বেসরকারি খাতকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে যুক্ত করা হয়েছে। এসডিজি অর্জনে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হলে অবশ্যই আকর্ষণীয় প্রকল্প তাদের দিতে হবে। কিন্তু এসডিজির জন্য নির্দিষ্টভাবে এখনও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ উপযোগী কোনো প্রকল্প চিহ্নিত হয়েছে বলে জানা নেইে। এর বাইরে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) এবং বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনগুলোকে এসডিজি অর্জনে যুক্ত করা দরকার ছিল। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে বলে প্রতিভাত হয়। এছাড়া সরকারের তরফ থেকেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের নিশ্চয়তা বিধান করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে এসডিজিহ অর্জনের ক্ষেত্রে এমডিজির পর্যায়ের সাফল্য অর্জন কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
সর্বোপরি এসডিজি অর্জনে সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, সে বিষয়ে সুযোগ নিশ্চিত হচ্ছে না বলে সমাজের নানা প্রান্ত থেকে শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীতে আয়োজিত এসডিজি অর্জনে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নাট্যকার মামুনুর রশিদ এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি বলেছেন, সমাজে একটি বৈষম্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিবেশে সবকিছু কালোটাকার মালিকদের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সরকারের যে প্রশাসনযন্ত্র, তা উদারমুখী নয়। তিনি জেলা পর্যায়ে ডেপুটি কমিশনারদের হাতে অবারিত ক্ষমতা তুলে দেয়ার বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানান। এসডিজি অর্জনে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখছে না বলে তিনি মত দেন। তার এ অভিমত অমূলক নয়। কেননা এসডিজি অর্জনে এখন পর্যন্ত সরকারের ক্ষেত্রে যতগুলো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেখানে সরকারি কর্মচারীদের বাইরে সামগ্রিক নাগরিক সমাজকে তেমন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এছাড়া এসডিজি অর্জনে এর স্থানীয়করণ করার বিষয়ে জোর দেয়ার কথা বলা হলেও স্থানীয়করণের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু সভা সেমিনার আয়োজনের বাইরে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। এক্ষেত্রে স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু সেসব সংগঠন বা এনজিওগুলোকে এসডিজি অর্জন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি। ফলে এসডিজি অর্জনে তাদের মাধ্যমে যেসব বিনিয়োগ হওয়ার সুযোগ ছিল, তা কাজে লাগানো যায়নি।
এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে কভিড-১৯ সংক্রমণ। ২০২০ সালের মার্চে দেশে কভিড সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে প্রায় দুই বছর অর্থনৈতিক কার্যক্রম নানাভাবে ও নানা মাত্রায় বিঘিœত হয়েছে। এখনও সে ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। তার মধ্যে চলতি বছরের গোড়ার দিকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশে চলছে চরমমাত্রায় ডলার সংকট। এ সংকটের কারণে আমদানি ব্যয় মেটানো ও জরুরি পণ্যসামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী দিনে বাংলাদেশের এসডিজি অর্জন কোন পথে অগ্রসর হবে, সে বিষয়ে একটি যথাযথ পর্যালোচনার পাশাপাশি আগামী দিনে এসডিজি অর্জনে কী ধরনের পদক্ষেপ উপযুক্ত হবে সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা জরুরি।
যেহেতু বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এসডিজি অর্জনের একটি বৃহৎ লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তাই এর পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে আরও কার্যকর করার বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞদের সবাই একমত হচ্ছেন যে, করোনার কারণে এসডিজি অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে। এমনকি স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়াও করোনার কারণে ভুগছে। তাই এ বাস্তবতায় এসডিজি অর্জনের প্রক্রিয়াকে কীভাবে গতিশীল রাখা যায়, সে বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে এবং পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
এসডিজির পরিকল্পনাগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেটা একটা বড় ইস্যু। এর জন্য বিশ্ব অংশীদারত্ব প্রয়োজন। সামর্থ্য ও সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দারিদ্র্য বিমোচন, লিঙ্গসমতা চেতনা, অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা, বেসরকারি খাতের উদ্যোগ ও নতুনত্ব, মানব উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিনিয়োগ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা পেতে অনেক বেশি বিনিয়োগ, শক্ত-সমর্থ উন্নয়ন সহায়তা, পুঙ্খানুপুঙ্খ ও কার্যকর সংস্কারের উদ্যোগ প্রয়োজন এবং উন্নত ব্যবসার পরিবেশ, আর্থিক শৃঙ্খলা স্থাপন ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সমুন্নত রাখতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য একটি সক্রিয় ও ক্রমাগত স্থিতিশীল পরিবেশ, সরকারি খাতের সুশাসন এবং সরকার ও বিচার বিভাগের দক্ষতা ও সততা শক্তিশালীকরণ, একটি দ্রুত বর্ধনশীল ও ক্রমবর্ধমান শহুরে শ্রমশক্তির কার্যকর ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ও বিশ্বের দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে ঝুঁকি মোকাবিলার কার্যকরী ব্যবস্থাপনা। সর্বোপরি, এসডিজি অর্জনে সফল হতে হলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে জবাবদিহি এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।