মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার হিজল গাড়ি, কোটালি ও ছয়ঘরিয়া গ্রামের চাষিরা বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত এসিআই ও লালতীর কোম্পানির কুমড়ার বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন। কুমড়ার বীজ বপন করে গাছ হলেও কুমড়া না ধরায় এ এলাকার চাষিরা হতাশ। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বীজ কোম্পানি প্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকল খামারের আখ চাষ হয় না এমন পড়ে থাকা জমি বিঘাপ্রতি ১০ হাজার ৫০০ টাকায় ৬ মাসের জন্য ইজারা নেন কয়েকজন চাষি। এসব জমিতে এসিআই ও লালতীর কোম্পানির কুমড়া বীজ রোপণ করে বড় রকমের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তাদের। রোপণের পর জমিতে বড় বড় গাছ হলেও তাতে কুমড়া ধরেনি।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী, কোটালী ও ছয়ঘরিয়া গ্রামের চাষিদের প্রায় ১৭০ বিঘা জমিতে কুমড়া বীজ বপন করে এ সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। জমি ইজারা ও জমি প্রস্তুতের জন্য চাষাবাদ, সার, কীটনাশক, সেচ ও বীজ বপন ব্যয় কীভাবে পুষাবেন তা নিয়ে চাষিরা চিন্তিত।
ছয়ঘরিয়া গ্রামের চাষি শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, কেরুর জমি ইজারা নিয়ে লালতীর কোম্পানির কুমড়া বীজ ৫০ বিঘা এবং এসিআই কোম্পানির বীজ ১০ বিঘা জমিতে রোপণ করি। গাছ হলেও কুমড়া না ধরায় প্রায় ১২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। বীজ বিক্রির সময় নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
কোটালী গ্রামের চাষি আনিস উদ্দিন বলেন, ‘৩০ বিঘা কেরুর জমি ইজারা নিয়ে এসিআই ও লালতীর কোম্পানির কুমড়া বীজ বপন করলেও গাছে কোনো কুমড়া ধরেনি। কোম্পানির প্রতিনিধিরা এখন আর দেখা করছে না।’
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত চাষি হিজলগাড়ী গ্রামের সাইফুল আজম মিন্টু বলেন, ‘চলতি মৌসুমে চিনিকলের আড়িয়া ও ডিহি কৃষি খামারের ৫০ বিঘা জমি ১০ হাজার ৫০০ টাকা দরে ইজারা নিই। ওই জমিতে এসিআই কোম্পানির কুমড়ার বীজ কিনে এনে বপন করি। বীজ থেকে গাছ হলেও তাতে কুমড়া ধরেনি। বিষয়টি কোম্পানির প্রতিনিধি ও এলাকার দায়িত্বরত কৃষি অফিসারকে জানাই। এতে জমি ইজারা এবং চাষাবাদ বাবদ প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
কুমড়ার বীজ প্রসঙ্গে এসিআই (বীজ) কোম্পানির এরিয়া সেলস ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা এলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
লালতীর কুমড়া বীজ কোম্পানির সেলস ম্যানেজার ফরিদ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা শহরের আলী হোসেন সুপার মার্কেটে অবস্থিত বগা মিয়ার দোকান থেকে বীজ নিয়ে আমি বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। ওই বীজ ভালো কি মন্দ; তা আমি জানি না। এ বীজের দায়িত্ব নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার হিজল গাড়ি, কোটালী ও ছয়ঘরিয়া গ্রামের কয়েকজন চাষি এসিআই ও লালতীর কুমড়া বীজ বপন করে ফলন পায়নি। এতে চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পরিদর্শন করেছেন। আমরা সার মনিটরিং কমিটিতে আলোচনা করে কী কারণে ফল হয়নি তা দেখার জন্য জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।