এস আলমের ছয় ব্যাংকের ঋণ বিতরণে বিধিনিষেধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিতর্কিত চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের ঋণ বিতরণে সীমা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংককে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও সীমাতিরিক্ত ঋণ রয়েছে, তা নগদ আদায় ছাড়া নবায়ন করা যাবে না। গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে ছয়টি ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে।

ব্যাংকগুলো হলোÑইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
নির্দেশনাগুলো হলোÑকৃষি বিনিয়োগ, চলতি মূলধন এবং সিএমএসএমই খাতে ঋণ, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দেয়া ঋণ, নিজ ব্যাংকে রক্ষিত স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ঋণ সুবিধা ও শতভাগ নগদ মার্জিনের বিপরীতে ঋণ ও অন্যান্য পরোক্ষ ঋণসুবিধা ছাড়া অন্য কোনো ঋণ সুবিধা দেয়া যাবে না। এসব ঋণ ও ঋণ সুবিধা পাঁচ কোটি টাকার বেশি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
মেয়াদোত্তীর্ণ/সীমাতিরিক্ত বকেয়া ঋণের স্থিতি নগদ আদায় ছাড়া কোনো গ্রাহকের বিদ্যমান ঋণ সুবিধা নবায়ন/বর্ধিত করা যাবে না। অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান বিনিয়োগ অধিগ্রহণ করা যাবে না। এছাড়া প্রতিটি ব্যাংককে শীর্ষ ২০ ঋণ গ্রাহকের ঋণ আদায়ের তথ্য মাসিক ভিত্তিতে জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এই মুহূর্তে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বিনিয়োগ বন্ধের চেয়ে প্রথম টার্গেট দেয়া উচিত ছিল রিকভারি। এস আলমের সময়ে তার পছন্দের কর্মকর্তা ছাড়াও মেধাবী কর্মকর্তা রয়েছেন ব্যাংকটিতে। তাদের রিকভারির দায়িত্ব দিলে ব্যাংকটি আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ আট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত: এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় আট কর্মকর্তাকে গতকাল বরখাস্ত করেছে ব্যাংকটি।

এর মধ্যে একজন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), পাঁচজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এবং বাকি দুজন ব্যাংকের দুটি বিভাগের প্রধান। তারা হলেনÑঅতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেকিউএম হাবীবুল্লাহ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আকিজ উদ্দিন, মোহাম্মদ সাব্বির, মিফতাহ উদ্দিন, কাজী মো. রেজাউল করিম ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। এছাড়া প্রধান অর্থ পাচার প্রতিরোধ কর্মকর্তা (ক্যামেলকো) তাহের আহমেদ চৌধুরী ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল মো. নজরুল ইসলামকে বরখাস্ত করেছে ব্যাংকটি। এসব কর্মকর্তার সবাই এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সাইফুল আলমের একান্ত সচিব আকিজ উদ্দিন ও ইসলামী ব্যাংকের ঋণের দায়িত্বে থাকা মিফতাহ উদ্দিনও রয়েছেন। তারা দুজনই ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ছিলেন। এই দুই কর্মকর্তা ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ ও মানবসম্পদ বিষয়গুলো দেখভাল করতেন।

এর আগে গত সপ্তাহে এস আলমের মালিকানাধীন এই ছয় ব্যাংকসহ মোট ৯টি ব্যাংকের ইস্যুকৃত এক কোটি টাকা বা তার বেশি টাকার চেক নিজ নিজ ব্যাংক থেকে বা অন্য কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে নগদায়ন বন্ধের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া এস আলমের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাক বিভাগের কাছে থাকা হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। সদ্যবিদায়ী সরকারের আমলে সুবিধাভোগী অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী ছিল এস আলম গ্রুপ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এসব ব্যাংক পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নামে-বেনামে ঋণ বিতরণ ঠেকানো হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০