শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রতিযোগিতার চাপে আর নানা সংকটে ভারতী এয়ারটেলের কাছে ব্যবসা বিক্রি করে দিয়ে ভারত ছাড়ছে নরওয়ের টেলিনর গ্রুপ। খবর রয়টার্স, ইকোনমিক টাইমস।
ভারতের সবচেয়ে বড় টেলিকম অপারেটর ভারতী এয়ারটেল গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, এ হাতবদলের মধ্য দিয়ে ভারতের ছয়টি রাজ্যে টেলিনরের ব্যবসা অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে তারা।
টেলিনরের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই চুক্তির আওতায় ভারতী এয়ারটেল নগদ কোনো অর্থ দেবে না। লাইসেন্স ফি ও টাওয়ার নেটওয়ার্কের জন্য টেলিনরের যে দায়, তার দায়িত্ব তারা নেবে। পাশাপাশি টেলিনর ইন্ডিয়ার কর্মীদেরও আত্মীকরণ করা হবে।
ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, তরঙ্গ বাবদেই টেলিনরের দায়ের পরিমাণ এক হাজার ৬৫০ কোটি রুপির মতো। এছাড়া রয়েছে টাওয়ার ইজারাসহ বিভিন্ন চুক্তিও।
টেলিনরের চার কোটি ৪০ লাখ গ্রাহক মিলিয়ে ভারতী এয়ারটেলের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০ কোটি। পাশাপাশি এ চুক্তির ফলে ভারতীর ফোরজি নেটওয়ার্ক ও বাজারের আওতা বাড়বে, যা ভারতের টেলিকম খাতের আরেক বড় অপারেটর রিলায়েন্স জিও ইনফোকমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও শক্ত ভিত্তি জোগাবে।
অন্যদিকে এ চুক্তির ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম বাজার ভারতে টেলিনর অধ্যায়ের ইতি ঘটতে যাচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ২০০৮ সালে ভারতে ব্যবসা শুরু করার পর থেকে গত নয় বছরে টেলিনরের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।
ইউনিনরের ২২টি লাইসেন্স টেলিনর কিনে নেওয়ার পর দুর্নীতির অভিযোগে ভারতীয় আদালত সেগুলো বাতিল করে দিলে বড় বিপদে পড়ে নরওয়েজীয় কোম্পানিটি। অবলোপনের মাধ্যমে তারা গত বছর ভারতে তাদের সম্পদের পরিমাণ ৭৬ কোটি ডলারে নামিয়ে আনে।
ভারতসহ বিশ্বের ১৩টি দেশে কার্যক্রম চালিয়ে আসা টেলিনরের গ্রাহক সংখ্যা ২১ কোটি ৪০ লাখ। এছাড়া টেলিনরের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভিম্পেলকম কাজ করছে ১৪টি দেশে।
নরওয়ের টেলিনর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক। গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি, যা দেশের মোট মোবাইল ফোন সেবাগ্রহীতার প্রায় অর্ধেক।
টেলিনরের গ্লোবাল সিইও সিগভে ব্রেক্কে গত বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ভারত ছেড়ে যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না। বারবার পর্যালোচনা করে আমাদের মনে হয়েছে, ভারতে টেলিনরের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এককভাবে যে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ আমাদের করতে হতো, তা থেকে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে লাভ পাওয়া সম্ভব নয়।
ভরতী এয়ারটেল ও টেলিনর জানিয়েছে, আগামী এক বছরের মধ্যে তারা চুক্তির সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পারবে বলে আশা করছে।
ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ড, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ (পূর্ব), উত্তরপ্রদেশ (পশ্চিম) ও আসামে সাতটি সার্কেলে টেলিনরের কার্যক্রম রয়েছে। এ সাতটি সার্কেল থেকেই এয়ারটেলের মোট আয়ের ৩৫ শতাংশ আসে।
টেলিনর কিনে নেওয়ার খবরে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে ভারতী এয়ারটেলের শেয়ারের দাম ৫২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছায়।
Add Comment