Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:54 pm

এ ধরনের নাশকতা কাম্য নয়

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে গত ১৯ ডিসেম্বর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই ঘটনায়  মা-শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঢাকা রেলওয়ে থানায় করা হত্যা মামলাটির তদন্ত করেছে থানা-পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র‌্যাবসহ বিভিন্ন ইউনিট। এখন পর্যন্ত তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কোনো ইউনিটই ট্রেনে আগুনের ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করার কথা জানাতে পারেনি। তখন জানানো হয়েছে, মোহনগঞ্জ ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় জড়িত যাদের নাম জেনেছিলেন, তাদের সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া ছবি মেলেনি।

আবারও রেলে নাশকতার ঘটনা ঘটছে। রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে দুই নারী, এক শিশুসহ অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ চলন্ত ট্রেনটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রেলওয়ে ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, যশোরের বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ঢাকায় আসছিল। সায়েদাবাদ এলাকা অতিক্রম করার সময় ওই ট্রেনে আগুন দেয়া হয়। ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার কিছুক্ষণ আগে গোপীবাগ এলাকায় থামানো হয়। আগুনে ট্রেনটির তিনটি কোচ পুড়ে গেছে।

স্বাভাবিকভাবেই এ নাশকতার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করা হবে। অন্যদিকে ট্রেন-বাসসহ গণপরিবহনে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের বিরোধিতাকারীরা বলবে, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে কেউ যাতে কিছু করতে না পারে, সেজন্য এজেন্টদের দিয়ে সরকারই এসব নাশকতা চালাচ্ছে। আর এসব নাশকতার দায় চাপিয়ে দিচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে আমাদের বক্তব্য নেই। তবে যারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনর্ঘটন থামাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

অবশ্য শুক্রবারের ঘটনার ধরন নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। মোহনগঞ্জ ট্রেনের দুর্ঘটনার পর সতর্কতামূলক কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলছেন। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা উদাসীন থাকায় বিরোধীদের দাবির পক্ষেই থাকবে সাধারণ মানুষ। কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার দায়ভার ঢালাওভাবে বিশেষ কারও ওপর চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, নিরপেক্ষ তদন্তের আগে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক হবে না। ট্রেনের কোনো যাত্রীকে সন্দেহভাজন আখ্যা দিয়ে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো ন্যায়বিচার হবে না। ট্রেনে আগে থেকে অবস্থানকারী এবং ট্রেনে দায়িত্বপালনকারী প্রত্যেককেই তদন্তের আওতায় আনা উচিত। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা যেতে পারে।

আন্দোলনকারী বিরোধী হোক, কিংবা কোনো এজেন্ট হোক, বিচারের মাধ্যমে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। নাশকতা-সহিংসতা তথা সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করে সরকারের বিরোধিতা করা, কিংবা নাশকতা করে বিরোধীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া গণতন্ত্রের চর্চা হতে পারে না। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের। মানুষ জীবিকার প্রয়োজনেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেও ঘর থেকে বের হয়। জনজীবন যাতে অনিরাপদ না হয়, সেজন্য প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের দমন করে ট্রেনে নাশকতার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।