মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ‘বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইকোনমিক জোন) উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। অধিকাংশ এলাকার মাটি ভরাটের কাজসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে ২৫০টি নতুন শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে। ইপিজেডের ধারাবাহিকতায় এসব শিল্পে নারী-পুরুষ উভয়ের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ বছরের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের কাছে প্লট বরাদ্দের কাজ শুরু হবে বলে আশা করছে বেপজা। এ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটাবে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বেপজা গভর্নর বোর্ডের ৩৩তম সভায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বেপজাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পরবর্তীকালে ২০১৭ সালের ১৮ মে মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য এক হাজার ১৫০ একর জমি বরাদ্দের বিষয়ে বেপজা ও বেজার (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বেপজা ইন্টারন্যাশনাল
ইনভেস্টরস সামিট ২০১৮’-এ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উম্মোচন করেন।
বেপজা সূত্রে জানা যায়, এক হাজার ১৫০ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল। এতে প্রস্তাবিত মোট প্লটের সংখ্যা হবে ৬১৮। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের আওতায় শিল্প প্লটের সংখ্যা ২৫০টি। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রত্যাশিত শিল্প ৩০০-৩৫০টি এবং প্রত্যাশিত বিনিয়োগ ৩৬ হাজার ৯৯ কোটি টাকা (সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এতে সাড়ে চার লাখ দেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা করছে বেপজা।
বেপজা মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের নিকটবর্তী মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে এতে বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী প্লট দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া ইপিজেড স্থাপনে বেপজার বিশেষ দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও পেশাগত জ্ঞান বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের কাজকে অগ্রগামী করবে। দুই ফেইজে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ের কাজের প্রায় ৪০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। আর চলতি বছরের মধ্যেই প্লট বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আমরা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাট করে দেব।’
এ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হচ্ছে, সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখা, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ‘বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ’ ও ‘রপ্তানির ঊর্ধ্বগতি’র মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখা, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারী কর্তৃক রপ্তানিভিত্তিক শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশি নাগরিকের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ইপিজেড সংলগ্ন এলাকায় অগ্রজ ও পশ্চাৎপদ শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি।
উল্লেখ্য, ইপিজেডগুলোয় শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন তুলনামূলক বেশি। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাছে। তাই এখানে বিনিয়োগ করতে বেপজার বর্তমান বিনিয়োগকারীসহ সম্ভাব্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও দেশের বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আগ্রহী। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন হলে এখানে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে উঠবে; যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এ এলাকায় স্যাটেলাইট টাউন গড়ে তোলার মাধ্যমে মানুষ আধুনিক জীবনের সুযোগ-সুবিধা পাবে। শিল্প-কারখানা, স্কুল, আবাসিক ভবন, মসজিদ, হাসপাতালসহ সব ধরনের সুবিধা রাখা হবে। ব্যাকোয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে এবং এলাকাটি কর্মমুখর হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’খ্যাত চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্যের সঙ্গে এ ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ যোগ করবে নতুন মাত্রা।