শেয়ার বিজ ডেস্ক :সব বিভেদ ভুলে ঐক্য ও সহনশীল সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ভাষণে একথা বলেন তিনি। বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘আত্মা’কে ফিরিয়ে আনতে চান, দেশকে ‘বিভক্ত না করে ঐক্যবদ্ধ’ করতে চান।
ভোটের মাঠে তুমুল লড়াই আর অনেক তিক্ততার পর ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য পেনসিলভেইনিয়ায় জয়ের মধ্য দিয়ে শনিবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের ২৭৩টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত হয়। আর তাতেই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বাইডেনের হোয়াইট হাউসে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়।
কয়েক ঘণ্টা পর ডেলওয়্যার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটনে উৎসবমুখর সমর্থকদের সামনে ভাষণ দিতে এসে বাইডেন বলেন, ‘আমি এমন একজন প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যিনি বিভক্ত নয়, ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করবেন; যিনি লাল রাজ্য বা নীল রাজ্য দেখবেন না, শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে দেখবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম আমেরিকার আত্মাকে ফিরিয়ে আনতে, এই জাতির মেরুদণ্ড মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে পুনর্গঠন করতে এবং আমেরিকার প্রতি ফের পুরো বিশ্বের শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনতে, এখানে বাড়িতে আমাদের মধ্যে একতা ফিরিয়ে আনতে।’
নির্বাচনে যারা তাকে ভোট দেননি, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখন কর্কশ রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর দূরে ঠেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সময়, আবার একে অপরের দিকে তাকান, ফের একে অপরের কথা শোনেন, আর এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রতিপক্ষকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা বন্ধ করুন।’
কভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখ ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়েই এ সংখ্যাটি অনেক বেশি। জো বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারে এ ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার ওপর ব্যাপক জোর দেওয়া হয়েছিল। নবনির্বাচিত এ প্রেসিডেন্ট জানান, জানুয়ারিতে তার অভিষেকের দিন থেকেই যেন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিশ্চিত করতে তিনি তার করোনাভাইরাস রেসপন্স কমিটি গঠন করে রাখবেন। ৭৭ বছর বয়সি জো বাইডেন এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ডেলাওয়ারের সবচেয়ে বেশি সময়ের সেনেটর তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন নবনির্বাচিত কমলা হ্যারিস। যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যর উইলমিংটন থেকে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, নতুন নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে তার দেশের জনগণ নতুন দিনের সূচনা করেছেন। গণতন্ত্র যখন ঝুঁকিতে, নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে মার্কিন জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন দিনের সূচনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের উদ্দেশে কমলা বলেন, ‘আমাদের দেশকে যারা সুন্দরভাবে গড়ে তুলেছেন, সেই জনগণকে ধন্যবাদ।’ তিনি তার ভাষণে আরও বলেন, ‘আমি জানি, সময়টা চ্যালেঞ্জিং; বিশেষ করে গত কয়েক মাস। দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, উদ্বেগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমরা আপনাদের ধৈর্য, সাহস, সহনশীলতা ও সহানুভূতি দেখেছি।’ কমলা বলেন, ‘আপনারা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। আপনারা আশা, ঐক্য, শালীনতা, বিজ্ঞান ও সত্যকে বেছে নিয়েছেন। আপনারা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনকে বেছে নিয়েছেন।’
বাইডেনের জয়ের খবর যখন প্রকাশিত হচ্ছিল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখন ছিলেন ভার্জিনিয়ার স্টার্লিংয়ে গলফ কোর্সে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভোটের হার দেখেই বিজিত প্রার্থী হার স্বীকার করে নেন, তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও তা করেননি; বরং তিনি মামলা করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের পর ট্রাম্পই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যাকে এক মেয়াদ দায়িত্ব পালন শেষে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হচ্ছে।
তুমুল লড়াই আর অনেক তিক্ততার পর ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য পেনসিলভেইনিয়ায় জয়ের মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। তার রানিং মেট কমলা হ্যারিস প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। আর এর মধ্য দিয়ে বহু আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দেওয়া রিপাবলিকান দলের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
সাধারণত ভোটের রাতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন, তার ফয়সালা হয়ে যায়। তবে এবার করোনা মহামারির মধ্যে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হতে লেগেছে দীর্ঘ সময়। গত ৩ নভেম্বর ভোটগ্রহণের পর এই চার দিন ধরে চলে গণনা, সেইসঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা ও উত্তেজনা। মহামারির মধ্যে এ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট পড়ায় কয়েকটি রাজ্যে গণনা শেষ হতে কয়েক দিন সময় লেগে যায়। সব মিলিয়ে এবার ৬৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ১২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
প্রথম দিকে ভোট গণনা শেষ হওয়া রাজ্যগুলোয় দুই প্রার্থীই প্রত্যাশা অনুযায়ী জয় পেয়ে যান। সে কারণে প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন, সেই প্রশ্নের জবাব পেতে বরাবরের মতোই তাকিয়ে থাকতে হয় ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে বিবেচিত কয়েকটি রাজ্যের ভোটের ফলের দিকে। এই কদিন পেনসিলভেইনিয়ার সঙ্গে জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও আলাস্কায় ভোট গণনার দিকে নজর ছিল সারা বিশ্বের। এর মধ্যে প্রথম দিকে পেনসিলভেইনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও আলাস্কায় ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও পোস্টাল ব্যালট গণনা শুরুর পর শুক্রবার পাল্টাতে থাকে চিত্র। পেনসিলভেইনিয়া ও জর্জিয়ায় ট্রাম্পকে টপকে এগিয়ে যান বাইডেন।
শুক্রবার জর্জিয়ায় ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হলেও দুই প্রার্থীর ব্যবধান দশমিক পাঁচ শতাংশের কম হওয়ায় সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী পুনর্গণনার সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে আগাম ভোটের ওপর ভর করে নির্বাচনী ফল বাইডেনের দিকে ঝুঁকতে থাকায় ভোট গণনা বন্ধের দাবি জানান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কোনো প্রমাণ ছাড়াই তিনি ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলেন। পেনসিলভেইনিয়ায় ভোট গণনা বন্ধের দাবি নিয়ে আদালতেও গিয়েছিলেন তার অনুসারীরা। এ নিয়ে দুনিয়াজুড়ে আলোচনার মধ্যে শনিবার পেনসিলভেইনিয়ায় ট্রাম্পের চেয়ে ভোটের ব্যবধান বাড়িয়ে বাইডেন জয়ী হওয়ায় রাজ্যের ২০টি ইলেকটোরাল ভোট চলে আসে তার পক্ষে।
আর তাতেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টির বেশি ইলেকটোরাল ভোট হয়ে যায় আগে থেকে ২৫৩টি ভোট নিশ্চিত করা বাইডেনের। পেনসিলভেইনিয়ার পরপরই নেভাডাতেও বাইডেনের জয়ের খবর আসে। তাতে সব মিলিয়ে ট্রাম্পের ২১৪ ইলেকটোরাল ভোটের বিপরীতে বাইডেনের ভোট দাঁড়ায় ২৭৯টি।