মোগল আমলের অন্যতম একটি স্থাপত্য নোয়াখালীর বজরা শাহি মসজিদ। জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা নামক স্থানে মসজিদটি অবস্থিত।
দিল্লির মোগল সম্রাটরা অবিভক্ত ভারতবর্ষ প্রায় ৩০০ বছর শাসনকালে বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মাণ করেন। বজরা শাহি মসজিদ এর মধ্যে অন্যতম। মোগল জমিদার আমান উল্লাহ ১১৫৪ হিজরি সন, ১১৩৯ বাংলা মোতাবেক ১৭৪১ সালে এটি নির্মাণ করেন। এটি দিল্লির বিখ্যাত জামে মসজিদের আদলে নির্মিত হয়েছে। জমিদার আমান উল্লাহ তার বাড়ির সামনে ৩০ একর জমিতে দিঘি খনন করেন। এ দিঘির পশ্চিম পাশে নির্মিত হয় মসজিদটি।
মসজিদের দৈর্ঘ্য ১১৬ ফুট, প্রস্থ ৭৪ ফুট। মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট; গম্বুজগুলো মার্বেল পাথরে মোড়ানো। ভেতরে রয়েছে নয়নাভিরাম কারুকাজ। এই কারুকাজ যে কাউকে মোহিত করবে। মসজিদের ভেতরে মসজিদে নববির মতো অবতল আকৃতির মেহরাব রয়েছে। প্রবেশপথে ধনুক আকৃতির দরজা রয়েছে। তাছাড়া এ প্রবেশপথে কয়েকটি গম্বুজও রয়েছে। ১৯০৯ সালে এ মসজিদটি একবার সংস্কার করা হয়।
নোয়াখালীসহ সমগ্র বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে এ মসজিদের ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে। মোগল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের বিশেষ অনুরোধে পবিত্র মক্কা শরিফের বাসিন্দা হজরত মাওলানা শাহ আবু সিদ্দিকী এ ঐতিহাসিক মসজিদের প্রথম ইমাম ছিলেন। বর্তমানে এ ইমামের সপ্তম পুরুষ ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কথিত আছে, এ মসজিদে কিছু মানত করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে শত শত মানুষ এসে এ মসজিদে দান-খয়রাত ও শিরনি বিতরণ করেন। অনেকে এসে এখানে নামাজ আদায় করেন। তাছাড়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক এখানে আসেন মসজিদটি দেখার জন্য। মসজিদের ইমাম সাহেব কিংবা খাদেম দর্শনার্থীদের মসজিদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিস্তারিত তুলে ধরেন তাদের কাছে।
ছায়া-সুনিবিড়, কোলাহলমুক্ত সবুজের সমারোহের ফাঁক গলে দাঁড়িয়ে থাকা বজরা শাহি মসজিদ দেখতে আপনিও আসতে পারেন এবং দিঘির পাড়ে বসে মুক্ত বাতাস আহরণ করতে পারেন।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ট্রেনে করে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী নামাবেন। সোনাইমুড়ী থেকে বাস কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে বজতা হাসপাতালের সামনে নামবেন। দূরত্ব তিন কিলোমিটারের মতো। আর ঢাকা থেকে বাসে সোনাইমুড়ী অথবা মাইজদীগামী বাসে বজরা স্টেশনেই নামতে পারেন। বাসে গেলে অন্য কোনো যানবাহনের প্রয়োজন পড়বে না। সেখান থেকে ২০০ গজ পশ্চিমেই ঐতিহাসিক বজরা শাহি মসজিদ।
তারেকুর রহমান
