নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ৪৮তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদ (সিএফএম) পর্যায়ের অধিবেশন আয়োজন করছে পাকিস্তান। ‘একতা, ন্যায়বিচার এবং উন্নয়নের জন্য অংশীদারিত্ব’ প্রতিপাদ্যে আগামী ২২ ও ২৩ মার্চ ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন। ওআইসির ইসলামাবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। গতকাল রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত পাকিস্তান ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত জানান, বিচিত্র ও ব্যাপক বিষয়বস্তু নিয়ে ওআইসি ৪৮তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে বিশেষ গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা ইস্যু। অধিবেশন চলাকালে এ ইস্যুতে এক বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করবে পাকিস্তান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও অধিবেশনে আফগানিস্তানে জরুরি মানবিক পরিস্থিতি নিরাময়ে ১৭তম বিশেষ অধিবেশনের সময় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করার সুযোগ পাবে সদস্য দেশগুলো।
ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, সম্মেলনে শান্তি ও নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা এবং ওআইসির ভূমিকা পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে আলোচনা হবে। অধিবেশন চলাকালে গৃহীত ১০০টির বেশি রেজুলেশন ও সমসাময়িক প্রধান ইস্যুগুলোয় ওআইসি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবে।
হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ইসলামাবাদ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রচার, সব ইসলামিক জনগণের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ওআইসি সদস্য দেশগুলোর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের প্রচারে পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতির প্রতিনিধিত্ব করে। এই দৃষ্ঠিভঙ্গির আলোকে পাকিস্তান ওআইসি সদস্যরাষ্ট্র এবং এর বাইরেও সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের সেতু তৈরি করতে চায়। ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী জানান, এবারের ইসলামাবাদ সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মখদুম কোরেশি অন্য সদস্য রাষ্ট্রসহ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতি রোহিঙ্গা মুসলিম ইস্যু আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
রোহিঙ্গা ইস্যু কেন সমাধানের মুখ দেখছে না, জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, সমস্যাটি দীর্ঘ সময়ের। পাকিস্তানেও রোহিঙ্গা রিফিউজি রয়েছে। ’৭০-৮০ দশকে অনেক রোহিঙ্গা রিফিউজি পাকিস্তানে এসেছে। তারা এখন পাকিস্তানি নাগরিক। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কূটনৈতিকভাবে আলোচনায় আসতে হবে।
ওআইসির ইসলামাবাদ পাকিস্তানের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার। তিনি বলেন, ওআইসির ৪৮তম অধিবেশনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, কারণ পাকিস্তানের হীরকজয়ন্তী বা ৭৫তম বার্ষিকী একই সময়ে উদ্যাপিত হবে। পাকিস্তান এই আয়োজনে অতিথিদের স্বাগত জানাতে উম্মুখ। প্রতিনিধি দলের প্রধানকে ২৩ মার্চ ঐতিহ্যবাহী ‘পাকিস্তান দিবস প্যারেড’ দেখার আমন্ত্রণ জানানো হবে। ইসলামী সংহতি ও সহযোগিতার বন্ধনকে আরও জোরদার করার জন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার। তিনি বলেন, ইসলামাবাদ আত্মবিশ্বাসী যে, ৪৮তম সিএমএফ আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ইসলামিক বন্ধনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এক যুগান্তকারী অধিবেশন হিসেবে প্রমাণিত হবে। আমাদের পক্ষ থেকে পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।