নাজমুল হুসাইন: আতপ চালে ক্রেতাদের আগ্রহ না থাকায় ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সিস্টেম) ট্রাক সেলে লোকসান গুনতে হচ্ছে ডিলারদের। ফলে রাজধানীতে ট্রাক সেলের যে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী ট্রাক সেল হচ্ছে না। তিন দিন আগে ঢাকা মহানগরীতে ট্রাক সেলের সংখ্যা কমে মাত্র ২৩টিতে দাঁড়ায়। বর্তমানে খাদ্য অধিদফতরের তোড়জোড়ে এ সংখ্যা আবার বেড়েছে। মহানগরীতে গতকাল মঙ্গলবার ৮৯ ডিলার বিভিন্ন জায়গায় চাল ও আটা বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে শুরু হয় খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রির কর্মসূচি। এবার চালের দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা করা হলেও সিদ্ধ চালের পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে আতপ চাল। দেশের বেশিরভাগ মানুষ আতপ চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত না হওয়ায় ন্যায্য মূল্যের এই চাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক ক্রেতাই। শুরুতে ঢাকা মহানগরীর ১২০টি স্থানে ট্রাক সেলের কথা ছিল। কিন্তু ক্রেতাদের কাছে ওএমএসে দেওয়া আতপ চালের চাহিদা না থাকায় এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
ঢাকা রেশনিং প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুরুর পর থেকেই ক্রমাগত কমেছে ট্রাক সেলের সংখ্যা। এতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ট্রাক সেলের সংখ্যা মাত্র ২৩-এ নেমে যায়। পরে খাদ্য অধিদফতর থেকে ডিলারদের প্রতি নিয়মিত ট্রাক সেলে কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পরে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এ সংখ্যা আবারও বেড়েছে। ওইদিন ঢাকায় ট্রাক সেল ছিল ৮৬টি। আর গতকাল এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯-তে।
ডিলাররা বলছেন, আগে সিদ্ধ চাল যে দামে বিক্রি হতো, এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ দামে আতপ চাল কিনতে আগ্রহী নন ক্রেতারা। এতে প্রতিদিন ট্রাক সেলে কিছু আটা বিক্রি হলেও চালের ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে সবার মধ্যে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে।
খোলাবাজারে চাল বিক্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলমগীর সৈকত বলেন, ‘আগে যে কোনো ওএমএসে ঢাকা শহরে ট্রাকের চাহিদা ছিল ১৩১টি। কিন্তু এবার ক্রেতাদের অনাগ্রহের কারণে চাল বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমত, চালের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে এবং ঢাকার লোকজন আতপ চাল খাওয়ায় অভ্যস্ত না হওয়ায় এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। ফলে ডিলাররাও লোকসানে ট্রাকের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।’
এদিকে ওএমএসে চাল-আটা বিক্রি কর্মসূচি বিপাকে ফেলেছে দরিদ্র ক্রেতাদের। রাজধানীর বেশ কয়েকটি জায়গায় আগের মতো ট্রাক সেলের দেখা না পেয়ে হতাশ হয়েছেন তারা। অনেকে দুপুর পর্যন্ত ট্রাকের অপেক্ষায় থেকে খালি হাতে ফিরে যান।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রামপুরা জামতলা এলাকায় ওএমএসের ট্রাকে অলস সময় কাটাচ্ছেন বিক্রেতারা। বস্তি বাসিন্দা, রিকশাচালক ও নি¤œআয়ের মানুষ ট্রাকের কাছে এসে চাল দেখে আবার চলে যাচ্ছেন।
ট্রাক সেলের কর্মী বলেন, ‘এবার আতপ চাল দেওয়ায় লোকজন কিনছে না। বেলা ২টা পর্যন্ত ২০ বস্তা চালের মধ্যে বিক্রি হয়েছিল মাত্র তিন বস্তা। কিন্তু আটা বিক্রি হয় পাঁচ বস্তা।’
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন ডিলার বলেন, ‘পণ্য বিক্রি না হওয়ায় প্রতিদিন ট্রাক ভাড়া ও কর্মীদের বেতন বাবদ লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে কয়েকদিন ট্রাক সেলে আসিনি। কিন্তু সরকারি ডিলার হওয়ায় এখন বাধ্য হয়ে ট্রাক সেলে আসতে হচ্ছে। প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে বাধ্য হয়েই।’
বিক্রির ক্ষেত্রে প্রায় একই চিত্র দেখা যায় শ্যামলী সিনেমা হল, বিএনপি বস্তি এলাকা ও এফডিসির সামনে। এসব এলাকায় সকাল থেকে ট্রাক বসে থাকলেও ক্রেতাদের তেমন সাড়া ছিল না।
একজন ক্রেতা বলেন, ‘সরকার কেন যে আতপ চাল বিক্রি করছে, বুঝলাম না। কোথাও আতপ চাল সিদ্ধ করে ভাত খেতে শুনিনি। মানুষ কি এসব কিনে বিরিয়ানি খাবে?’