নাজমুল হুসাইন : নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প মূল্যে ভোগ্যপণ্য বিতরণের একমাত্র সরকারি কার্যক্রম হচ্ছে ওএমএস (ওপেন মার্কেট সিস্টেম)। এছাড়া ওএমএসের মাধ্যমে সরকার দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারে ঊর্ধ্বমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। গত বছর মোটা চালের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এজন্য বাড়ানো হয় ওএমএসের ব্যাপ্তি। এ সময় আগের বছরের তুলনায় ওএমএসের মাধ্যমে তিন গুণের বেশি ভোগ্যপণ্য বিক্রি করা হয়।
খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে দেশে ওএমএসের আওতায় বিক্রি করা হয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার টন ভোগ্যপণ্য। তবে ২০১৬ সালে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৯৬ হাজার টনে। গত বছর চাল ও আটাÑ এ দুই ভোগ্যপণ্যেরই বিক্রি বেশি হয়েছে। ওই বছর চাল বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার টন আর গম ৩ লাখ ২০ হাজার টন; যা আগের বছরের তুলনায় ২ লাখ ৬০ হাজার টন চাল ও ১ লাখ ৫৪ হাজার টন বেশি গম।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের পরিচালক (সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন) কাজী নুরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দরিদ্রদের সহায়তার জন্য ওএমএস চালু হয়েছে। এর আরেক উদ্দেশ্য বাজার নিয়ন্ত্রণ। গত বছর মোটা চালের দাম কিছুটা বেশি থাকায় বেশি বেশি ওএমএস কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। বছরের শুরুতে ওএমএস পণ্যের দাম কমায় ভোক্তারাও সেই বছর বেশি চাল-গম ক্রয় করেছে। এতেই বেড়েছে এ কার্যক্রম।’
এদিকে খাদ্য অধিদফতরের তথ্য আরও বলছে, ওএমএসের পাশাপাশি দেশে বেড়েছে দুস্থ মানুষের জন্য ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে টিআর ও এফএফডাব্লিউ খাতে খাদ্যশস্যের বিতরণ। দেশে এসব খাতে গত বছর বিতরণ করা হয় ১৪ লাখ ৫১ হাজার টন চাল ও গম; যা ২০১৫ সালে ছিল ১২ লাখ ২ হাজার টন।
তথ্য বলছে, বিতরণ বাড়লেও তেমন বাড়েনি গত বছরের সংগ্রহ কার্যক্রম। ২০১৫ সালে দেশে চাল ও গমের সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার টন। আর ২০১৬ সালে সংগ্রহ হয় ১৬ লাখ ৫৪ হাজার টন। অর্থাৎ মাত্র ৩৪ হাজার টন বেশি। গত বছর ৬ লাখ ৭০ হাজার টন বোরো ধান, ৫ লাখ ৮৬ হাজার টন বোরো চাল, ২ লাখ টন আমন ধান ও ১ লাখ ৬৮ হাজার টন গম সংগ্রহ করে সরকার।
ওএমএস কার্যক্রম নিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের তুলনায় গত বছর ওএমএস চালু ছিল দীর্ঘ সময়। আওতাভুক্ত এলাকা ও বেশি উপজেলা পর্যন্ত। গত বছরের মার্চে ওএমএসের আওতায় পণ্যমূল্য কমানো হয়। তখন প্রতি কেজি চালের দাম ২০ টাকার পরিবর্তে ১৫ টাকা ও আটার কেজি ১৯ টাকা থেকে ১৭ টাকা করা হয়েছিল। এছাড়া আগে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে ওএমএস কার্যক্রম চললেও সে সময় তা উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছিল।
দেশে প্রথম ২০০৭ সালে ওএমএস কর্মসূচির আওতায় ট্রাকে করে খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু করে সরকার। চাহিদার পরিপেক্ষিতে মজুদের সঙ্কট না থাকলেই এখন চালু থাকে এ কার্যক্রম। এখনো ওএমএস কর্মসূচির আওতায় যে কেউ প্রতি কেজি চাল ১৫ টাকা ও আটা ১৭ টাকায় কিনতে পারছেন। তবে একজন সর্বোচ্চ ৫ কেজি পণ্য কিনতে পারেন।
এদিকে গতকাল ওএমএসের কয়েকজন ডিলারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর চালের দামে অনেক বেশি থাকায় মূলত ওএমএসের বেশি বিক্রি হয়েছে। বিশেষ করে গত জুলাই-আগস্টে চাল কিনতে দরিদ্র মানুষের লাইন ক্রমেই বাড়ছিল ওএমএসের গাড়ির সামনে। এসব বিষয়ে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে খাদ্য বিভাগের খোলা বাজারে চাল বিক্রি, ওএমএস কার্যক্রমও নিয়মিত করা দরকার। তা বাড়া নিশ্চয়ই সুখবর। তবে একই সঙ্গে সরকারের এসব সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিগুলোর মাঠপর্যায়ে নজরদারি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে হতদরিদ্রের জন্য ১০ টাকায় চাল বিক্রি নিয়ে যা লংকাকাণ্ড হয়েছে, সে রকম হতে পারে।’