Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:51 am

‘ওভার দ্য কাউন্টার’ (ওটিসি) : ধুঁকছে আলফা ও বাংলাদেশ টোব্যাকো

বাংলাদেশ টোব্যাকো ও আলফা টোব্যাকো। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রথম ৯টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে এ দুই প্রতিষ্ঠানের নাম। ওই সময় কোম্পানি দুটির হাঁকডাক ছিল বেশ। আর্থিক অবস্থা ও ব্যবসা ছিল রমরমা। কিন্তু পরে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ও নানা কারণে মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রায় নড়বড়ে অবস্থানে পৌঁছেছে কোম্পানি দুটি। বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ‘জেড’ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান দুটির শেষ ঠাঁই এখন দাঁড়িয়েছে ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ (ওটিসি) মার্কেটে। আর ক্রেতা না থাকায় ওটিসি মার্কেটে কোম্পানি দুটির শেয়ারের কোনো লেনদেনও হচ্ছে না। ফলে কোম্পানি দুটির সঙ্গে ধুঁকছেন এর বিনিয়োগকারীরাও।

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ : বাংলাদেশ টোব্যাকো ও আলফা টোব্যাকো। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রথম ৯টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে এ দুই প্রতিষ্ঠানের নাম। ওই সময় কোম্পানি দুটির হাঁকডাক ছিল বেশ। আর্থিক অবস্থা ও ব্যবসা ছিল রমরমা। কিন্তু পরে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ও নানা কারণে মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রায় নড়বড়ে অবস্থানে পৌঁছেছে কোম্পানি দুটি। বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ‘জেড’ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান দুটির শেষ ঠাঁই এখন দাঁড়িয়েছে ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ (ওটিসি) মার্কেটে। আর ক্রেতা না থাকায় ওটিসি মার্কেটে কোম্পানি দুটির শেয়ারের কোনো লেনদেনও হচ্ছে না। ফলে কোম্পানি দুটির সঙ্গে ধুঁকছেন এর বিনিয়োগকারীরাও।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর ডিএসইর যাত্রার শুরুর দিকে তালিকাভুক্ত হয় আলফা টোব্যাকো। সময়টা ১৯৭৬ সাল। তখন হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হতো। তবে এসব কোম্পানির মধ্যে চাহিদার শীর্ষে ছিল এ কোম্পানির শেয়ার। তখন এর শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখা যেতো। বছর শেষে এর সন্তোষজনক লভ্যাংশ পেতেন শেয়ারহোল্ডাররা। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকেই এ কোম্পানির আর্থিক অবস্থা মন্দা হতে থাকে। ফলে কমে যায় লভ্যাংশ প্রদানের হার।

প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০২ সালেও প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে। ২০০৪ সালে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে বি ক্যাটাগরিতে নেমে আসে। এরপর দীর্ঘ একযুগ কেটে গেলেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ প্রদান করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে ২০০৯ সালে ওটিসি মার্কেট গঠন হলে সেখানে এর অবস্থান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ বার্ষিক সাধারণ সভা করে ২০১৪ সালে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সব উৎপাদন বন্ধ করেছে।

এদিকে দিন যতই যাচ্ছে ততই নাজুক হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা। ২০১৪ সালে এ কোম্পানির লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। পরের বছর তা বেড়ে হয় ৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে সে লোকসান বেড়ে হয় ১০ কোটি ৫৫ লাখ। অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য হারে লোকসানে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি আয় এবং শেয়ারপ্রতি সম্পত্তির। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি শেয়ারে লোকসান রয়েছে ৩৬ টাকা ৬৬ পয়সা। একইভাবে শেয়ারপ্রতি সম্পদের দিকে নজর দিলে দেখা যায় এখানেও প্রতি শেয়ারে লোকসান রয়েছে ৩০৫ টাকা ৫১ পয়সা। ২০১৫ সালে সর্বশেষ এ কোম্পানির ১০০ শেয়ার লেনদেন হয়।

এ প্রসঙ্গে আলফা টোব্যাকোর কোম্পানি সচিব নাসিমা খাতুন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের অবস্থা দীর্ঘদিন থেকে নাজুক রয়েছে। বর্তমানে বন্ধ রয়েছে উৎপাদনও। আর এ কারণে আমরা চাইলেও অভার দ্য কাউন্টার মার্কেট থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না।’
‘কবে নাগাদ কোম্পানি উৎপাদনে যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত উৎপাদন শুরু করে আবারও মূল মার্কেটে ফিরে যেতে পারি। কিন্তু কবে নাগাদ এটা করতে পারবো তা বলা সম্ভব হচ্ছে না।’

ওটিসিতে থাকা কোম্পানি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে আমাদের কিছু করার থাকে না। বিনিয়োগকারীদের মতো আমরাও এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে ভোগান্তিতে আছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যদি তার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করতে না পারে, সে দায় শেয়ারহোল্ডারদের নয়। প্রতিষ্ঠানের উচিত যা সম্পত্তি রয়েছে, তা বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের দায়দেনা মিটিয়ে দেওয়া।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘কীভাবে এ মার্কেটের লেনদেন সহজ করা যায় সে বিষয় নিয়ে আমরা ভাবছি। আমার জানা মতে, বিএসইসিও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আশা করছি এ ভোগান্তি বেশি দিন থাকবে না।’

একই অবস্থা বাংলাদেশ টোব্যাকোরও। আলফা টোব্যাকোর মতো পুঁজিবাজারে এ কোম্পানির সুনাম বিনষ্ট হতে থাকে ২০০০ সালের পর থেকে। ২০০১-২ সালেও এ প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের ২৫ শতাংশ করে লভ্যাংশ প্রদান করে। এর বছর ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে যায় এ প্রতিষ্ঠানটি। এরপর গত চৌদ্দ বছর এ কোম্পানি থেকে কোনো লভ্যাংশ পাননি শেয়ারহোল্ডাররা।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ প্রায় ৪ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে এর শেয়ারপ্রতি আয়ে লোকসান রয়েছে ৪৮ টাকা ৭ পয়সা করে। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদে লোকসান রয়েছে প্রতি শেয়ারে ৩৩৫ টাকা। এ প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ লেনদেন হয় ২০১২ সালে। আলফা টোব্যাকোর মতো এ কোম্পানির উৎপাদনও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়।