ওটিসি মার্কেটে পাঠিয়ে দুর্বল কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়া হয়

আমাদের দেশে কোনো কোম্পানি ওটিসি মার্কেটে গেলে সে কোম্পানির মালিকরা খুশি হন। কারণ, ওটিসি মার্কেটে গেলে তো তাদের তেমন কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। পাঁচ বছর ধরে লভ্যাংশ দিতে না পারা বা উৎপাদনে না থাকার কারণে সাধারণত কোনো কোম্পানিকে শাস্তি হিসেবে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। ওটিসি মার্কেটে পাঠালে উল্টো ওইসব কোম্পানির সুবিধা হয়। অন্য দেশে যদি কোনো কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয় এবং পরবর্তীকালে ওই কোম্পানি ভালো করতে না পারলে প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে হয়। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজারে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের চিফ নিউজ এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী, এফসিএ।
মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ২০১৮ সালে প্রথম কয়েক মাস পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে ছিল; কিন্তু মাঝামাঝি থেকে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। এর মূল কারণ ছিল নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু তেমন কোনো বিশৃঙ্খলতা ঘটেনি। আবার ২০১৯ সালে সবার প্রত্যাশা ছিল বাজার ভালো হবে। কারণ, নির্বাচনে সহিংসতা না হওয়ায় দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়নি। আবার দেশের অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক। সেক্ষেত্রে বাজার খারাপ হওয়ার কথা নয়। আসলে বাজারের মূল সমস্যা হচ্ছে ফান্ড ও ব্যাংকের তারল্য সংকট। যেহেতু মানি মার্কেটের সঙ্গে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত, তাই ব্যাংকে তারল্য সংকট হলে পুঁজিবাজারে কিছুটা প্রভাব পড়ে। ২০১৮ সালের শেষদিকে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে। আবার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী তুলনামূলকভাবে অনেক কম এবং এর সঙ্গে সাধারণ বিনিয়োগকারীও সেভাবে আসছেন না। কথা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা কেন আসবেন; কারণ বাজারের প্রতি তাদের আস্থা নেই।
তিনি আরও বলেন, আসলে আমাদের দেশে কোনো কোম্পানি ওটিসি মার্কেটে গেলে সে কোম্পানির মালিকরা খুশি হন। কারণ, ওটিসি মার্কেটে গেলে তো কোনো শাস্তি হলো না। সাধারণত যেসব কোম্পানি পাঁচ বছর ধরে লভ্যাংশ দিতে পারেনি বা উৎপাদনে নেই, সেসব কোম্পানিকে শাস্তি হিসেবে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। কিন্তু ওটিসি মার্কেটে পাঠালে উল্টো ওইসব কোম্পানির সুবিধা হয়। কিন্তু অন্য দেশে যদি কোনো কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়, এবং পরবর্তীকালে যদি ওই কোম্পানি ভালো করতে না পারে, সেক্ষেত্রে কোম্পানি বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
আবদুর রহিম হারমাছি বলেন, নির্বাচনের পর বাজার ইতিবাচক দেখা গেছে। এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত টার্নওভার এক হাজার কোটি টাকা ছিল। কিন্তু জানুয়ারির শেষের দিকে মুদ্রানীতি ঘোষণার পর বাজার নিম্নগতিতে ধাবিত হচ্ছে। নির্বাচনের পর বাজারের প্রতি সব ধরনের বিনিয়োগকারীর আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু এই মাঝামাঝি সময়ে কিছু তৎপরতার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যতটা আগ্রহ দেখা গেছে, ততটাই অনীহাও তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় বিএসইসি ও ডিএসইর কিছু সিদ্ধান্ত অনেক সমলোচিত হয়েছে। বিশেষ করে কিছু কোম্পানিকে হঠাৎ তালিকাচ্যুত করা বা ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। এর মানে হচ্ছে, ওইসব কোম্পানিকে ছাড় বা পালানোর সুযোগ করে দেওয়া। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দেওয়ার আগে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কতটুকু স্বার্থ রক্ষা হয়, সেটি আগে বিবেচনা করা উচিত নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর। আবার পুঁজিবাজার ডি-মিউচুয়ালাইজেশন হওয়ার পর যেটি প্রত্যাশা ছিল, তাও দেখা যাচ্ছে না। আসলে আইন অনুযায়ী বিএসইসি’র কর্মকর্তারা বাজার পরিচালনা করেন, নাকি নেপথ্যে কোনো অদৃশ্য শক্তি রয়েছে সেটিও দেখার বিষয়।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০