সবার মুখে এখন এক নাম ‘ওমিক্রন’, সার্সের নতুন ভ্যারিয়েন্ট (ধরন)। তবু উপসর্গ থাকলেও অনেকে যাচ্ছেন জনসমাগমস্থলে, আর সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে ঢিলেঢালা ভাব দেখা যায়, যা মোটেই কাম্য নয়। ওমিক্রনকে হালকাভাবে দেখার কিছু নেই, এ কথা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।
ভিন্ন নামে ডাকা হলেও ডেলটা বা ওমিক্রন সবই সার্স ভাইরাসের নানা ধরন। অসচেতনতায় কে যে কোন ধরনে আক্রান্ত হয়ে যাবে, কেউ জানে না। কভিডে আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে প্রতিদিন মৃত্যুহারও বাড়ছে। পরিসংখ্যান যা-ই বলুক, যে পরিবার বা প্রিয়জনকে হারায়, তার সে শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। কেবল মৃত্যুঝুঁকি নয়, বিছানা খালি না পাওয়ায় হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে অসুস্থ স্বজনদের নিয়ে যাতে ছুটে বেড়াতে না হয়; অক্সিজেনের অভাবে, সিটের অভাবে একজন মানুষকেও যাতে আর যন্ত্রণায় কাতরাতে না হয়, সেজন্যই দরকার সচেতনতা।
এখন শিশু-কিশোরেরাও আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের অনেকেরই এখনও টিকার দুটি ডোজ পায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তাদের নিরাপদ রাখার জন্য। তার মানে এই নয় যে, শিশুদের নিয়ে জনসমাগমে, বিপণিবিতানে বা মেলায় ঘুরে বেড়াবেন। তাদের বাড়িতেই রাখুন।
বয়স্ক বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে (উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনির রোগ) আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ডেলটা-ওমিক্রন যেকোনো ধরনই মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ বাড়িতে থাকলেও তাদের পরিবারের যেসব সদস্য বাইরে যাতায়াত করেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে নিজের অজান্তেই উপসর্গবিহীন বাহক হিসেবে বাইরে থেকে ভাইরাস বয়ে আনতে পারেন।
কেবল নিজের সচেতনতাই যথেষ্ট নয়। একজন মাস্ক পরলেন, কিন্তু বন্ধু, সহকর্মী, গণপরিবহনের সহযাত্রী কিংবা পাশ দিয়ে যাওয়া পথচারী মাস্কবিহীন থাকলে কোনো লাভ নেই। মাস্ক পরা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, যত্রতত্র কফ-থুতু (এমনকি ব্যবহƒত মাস্কও) ফেলা উচিত নয়।
টিকা নিলে করোনা হবে না এমন নয়। এমনকি বুস্টার নেয়ার পরও হতে পারে কভিড সংক্রমণ। কার কতটা গুরুতর হবে, তা কেউ জানে না। তাই টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সাধারণ ঠাণ্ডা-জ্বরের মতো উপসর্গই হতে পারে করোনাভাইরাসের উপসর্গ। হালকা সর্দি ও নাক বন্ধও হতে পারে করোনার লক্ষণ। উপসর্গ দেখা দিলেই পাঁচ-সাত দিনের জন্য নিজেকে পৃথক রাখুন অবশ্যই, যাতে অন্যদের মধ্যে না ছড়ায়। সম্ভব হলে টেস্ট করে নিন। হালকা সর্দি-কাশিকে অবহেলা করবেন না। তাই সচেতন ও দায়িত্বশীল হোন।
রাফিয়া আলম
ক্লিনিক্যাল স্টাফ, নিউরো আইসিইউ
স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা