Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:18 pm

ওমিক্রন নিয়ে সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রন যে নতুন বিপদের ঝুঁকি নিয়ে এসেছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি বড় জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দেশের আট বিভাগীয় শহরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু ওমিক্রন নতুনভাবে আবার সারা বিশ্বে দেখা দিচ্ছে, এখানে আমাদের দেশের মানুষকে একটু স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলতে হবে। আর শীতকালে প্রাদুর্ভাব বাড়ে। সাধারণত আমাদের দেশে শীতকালে একটু সর্দি-কাশিও হয়। সেদিকে লক্ষ রেখে সকলে মাস্কটা ব্যবহার করবেন।

তিনি বলেন, খুব বড় সমাগমে যাবেন না। সেখান থেকে একটু নিজেদের সুরক্ষিত রাখবেন। আর কোনো বড় সমাবেশ যেন না হয়, সেটার দিকে লক্ষ রাখবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি সবাই মেনে চলবেন, সেটাই আমি চাচ্ছি।

বিশ্বজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করা ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বাংলাদেশেও বাড়ছে। শনিবার পর্যন্ত দেশে ২১ জনের শরীরে এ ধরনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

দৈনিক নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত কভিড রোগীর হার এরই মধ্যে ছয় শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। চার মাসের বেশি সময় পর দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও আবার এক হাজার একশ’র ওপরে থাকছে।

ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জমায়েত বন্ধ করার সুপারিশ করেছে ‘কভিড-১৯-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’। এ বিষয়ে সরকারের নেয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে কমিটির তরফ থেকে।

গবেষকরা বলছেন, দুই ডোজ টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে না পারলেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এড়াতে সহায়তা করছে। আর তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিলে তা ওমিক্রনের সংক্রমণ থেকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারছে।

প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি বর্তমানে দেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেয়া হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবুজ সংকেত পেলে এর চেয়ে কম বয়সীদেরও টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

মহামারির মধ্যে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে প্রণোদনা দেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য আমরা বিশেষ বরাদ্দ বাজেটে রেখেছি। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আমাদের বাজেটে রাখা আছে। এর বাইরেও যদি প্রয়োজন হয় আমরা খরচ করতে পারব। সেভাবে আমাদের উদ্যোগ নেয়া আছে। তাছাড়া আমরা আলাদা একটা ফান্ডও তৈরি করেছি। কাজেই সেভাবেই আমরা মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে দেশে টিকা মজুতের পরিসংখ্যান তুলে ধরার পাশপাশি টিকা নিয়ে নানা অপপ্রচারের প্রসঙ্গেও কথা বলেন সরকারপ্রধান।  তিনি বলেন, ‘৩১ কোটির বেশি ডোজের ব্যবস্থা আমরা করে রেখেছি। এরই মধ্যে আমরা টিকা দিয়ে যাচ্ছি। একটি মানুষও যেন টিকা ছাড়া

না থাকে। সেক্ষেত্রে আমি দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাব, অনেকেই ভয় পান, গায়ে সুই ফুটবে সেই ভয়ও আছে। নানা ধরনের অপপ্রচারও ছিল।’

ওমিক্রনে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয় বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেজন্য আমরা বাংলাদেশে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। তাছাড়া আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা ভয় না পেয়ে টিকাটা নিয়ে নেন। টিকাটা নিলে অন্তত আপনার জীবনটা রক্ষা পাবে।

বাংলাদেশে এ টিকা যে সরকারি খরচে দেয়া হচ্ছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ভ্যাকসিন কেনাই নয়, ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য যেসব পণ্য প্রয়োজন হয়, যে লোকবল প্রয়োজন হয়, টেকনিশিয়ান প্রয়োজন হয় সেগুলো পরীক্ষা করার জন্যÑএসব কিন্তু আমরা করে দিচ্ছি একেবারে বিনা পয়সায়, পৃথিবীর অনেক ধনী দেশও বিনা পয়সায় দেয় না।

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি চিকিৎসক ও নার্সের অভাব পূরণ করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।