ওয়ারীতে জমি কিনে প্রতারণার শিকার আল-মুসলিম গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর ওয়ারীতে বাবা-ছেলের জালিয়াতি ও প্রতারণার শিকার হয়েছে পোশাক খাতের শিল্পগোষ্ঠী আল-মুসলিম গ্রুপ। ১১ বছর আগে এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আল-মুসলিম বিল্ডার্সের নামে ৩৭ কোটি টাকায় জমি কেনা হয়। কিন্তু সেই জমির বেশিরভাগ দখল দেয়নি জালিয়াতি ও প্রতারকরা। জমি বুঝে নিতে চাইলে প্রতারকরা আল-মুসলিম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে আসছে বলে আল-মুসলিম গ্রুপ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে। শুধু অভিযোগ নয়, এই গ্রুপের নামে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির শিকার হয়ে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে প্রতারণায় জড়িত বাবা গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

প্রতারণার শিকার আল মুসলিম গ্রুপের হেলাল খন্দকার ও মো. আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, কষ্টার্জিত প্রায় ৩৭ কোটি টাকা দিয়ে ওয়ারী থানাধীন ১নং নবাব স্ট্রিটে ৯২ শতাংশ সম্পত্তি কেনেন। তাদের আমমোক্তারনামা ও চুক্তি দলিল দেয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রি দলিল করে দিতে বললেই আজহারুল কবীর, ছেলে ইজাজ কবীরসহ তার পরিবারের সদস্যরা নানা তালবাহানা শুরু করেন। আল মুসলিম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে প্রতারক চক্র। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও মিথ্যা ও বিভ্রান্তকর

তথ্য দিচ্ছে তারা। এই চক্রের প্রতারণা ও জালিয়াতির শিকার হয়ে আমরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছি।

ভুক্তভোগীরা আরও জানিয়েছেন, এই জমির প্রকৃত মালিক ছিলেন দেবেন্দ্র মোহন সেন গং। ১৯৫০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাবকবলা দলিলে ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পত্তি ইব্রাহিম, খলিল, জলিল, ভকিল ও বসির ক্রয় করেন, যা তিনটি দাগে তাদের নামে প্রয়োজনীয় রেকর্ড হয়। আজহারুল কবীর কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে তার এক ভাই খলিলকে ষোলো আনা সম্পত্তির মালিক দেখিয়ে ১৯৭৪ সালের ২৩ জানুয়ারি একটি সাফকবলা দলিল করেন। পরে আজহারুল কবীরের ভাই সৈয়দ জহিরুল কবির অপর চার ভাই ইব্রাহিম, বসির, ভকিল ও জলিলের অংশ কিনে নেন। সৈয়দ জহিরুল কবির ৭৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ নিজ নামে রেকর্ড করেন।

অপরদিকে হাজেরা বেগম, মাহবুবুল হুদা ও সৈয়দ আজহারুল কবিরের নামে ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ রেকর্ড হয়। জহিরুল কবির ৭৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ থেকে ১৯৭৮ সালের ১১ এপ্রিল ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ বিক্রি করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের ২১ আগস্ট জাকির হোসেন, খালেদা গংদের কাছে ১০ দশমিক ৫০ কাঠা সম্পত্তি বিক্রি করেন। সিটি জরিপে সৈয়দ জহিরুল কবির ও হুমায়ুন কবিরের নামে রেকর্ড হয় এবং জাকির খালেদা গংয়ের নামে আলাদা খতিয়ানে রেকর্ড হয়। সৈয়দ আজহারুল কবির নিজেদের ৯২ দশমিক ০৫ শতাংশের মালিক দাবি করে আল মুসলিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লার কাছে জমি বিক্রির জন্য ২০১১ সালের ১৬ আগস্ট ১০ কোটি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বায়না নেন। আর নগদ নেন পাঁচ কোটি টাকা। মোট ১৫ কোটি টাকায় বায়না নেন। বায়না দলিল দেয়ার পর আমমোক্তার দলিল দিয়ে আল-মুসলিম বিল্ডার্সকে জমির আমমোক্তার নিয়োগ করেন। পরে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আরও একটি বায়না দলিল করেন তারা। জহিরুল কবির ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আমমোক্তার ও চুক্তিনামা দলিল করে হেলাল খন্দকারকে ৪২ দশমিক ৯০ শতাংশ জমির দখল বুঝিয়ে দেন। ওই জমি হেলাল খন্দকারের দখলে আছে।

অপরদিকে হুমায়ুন কবির একই তারিখে হেলাল খন্দকারকে দুটি আমমোক্তারনামা ও চুক্তিনামা দলিলে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশের দখল দেন। সৈয়দ আজহারুল কবীরের মালিকানায় ত্রুটি দেখা দেয়ায় মো. আব্দুল্লাহ মনোনীত হেলাল খন্দকারের অনুকূলে জহিরুল কবির থেকে দলিল করা হয়। এতে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। জরিপে আজহারুল কবীরের মালিকায় ত্রুটি আরএস ও সিটি জরিপে দেখা যায়। জাকির আহম্মেদ ২০১৬ সালের ৩ মার্চ ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ সম্পত্তি আমমোক্তারনামা ও চুক্তি দলিল অনুযায়ী হেলাল খন্দকারকে দেন। এতে ক্রেতার প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয় হয়। হেলাল খন্দকার মোট ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ সম্পত্তি চুক্তিনামা ও আমমোক্তারনামা বলে দখলে আছেন। কিন্তু আজহারুল কবীর চারটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা, নগদে পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে বায়না চুক্তি ও আমমোক্তার দলিল করে দেয়ার পরও সাফকবলা দলিল করে দিচ্ছে না। এছাড়া জহিরুল, হুমায়ুন, জাকির, আজিজসহ অন্য আত্মীয়রা জমি বিক্রি বাবদ নিয়েছেন আরও ২২ কোটি টাকা।

আল-মুসলিম গ্রুপের পরিচালক এসএম আমজাদ হোসাইন বলেন, আমরা ১১ বছর আগে যাচাই-বাছাই করে জমি কিনেছি। এরপরও আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমরা আট বছর ধরে ৬৬ শতাংশ জমির দখলে আছি। এরপরও তারা আমাদের কিছু জমির দখল বুঝিয়ে দিচ্ছে না। বরং তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। ফেসবুক লাইভে এসে মিথ্যাচার করছে। এছাড়া এ বিষয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, সৈয়দ আজহারুল কবীর ও তার ছেলে ইজাজ কবীরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুটি মামলায় তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় দুদিন এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০