ওয়ালটনের শীর্ষ পাঁচ বিডারকে বিএসইসির নোটিস

সাইফুল্লাহ আমান: বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসে ওয়ালটন হাইটেক কোম্পানি লিমিটেড। এই পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা কোম্পানিটির শেয়ারে সর্বোচ্চ দর প্রস্তাব করেছে, তাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এছাড়া এনার্জি প্যাকের টপ বিডারদের কাছেও ব্যাখ্যা চেয়েছে কমিশন।

ওয়ালটনের টপ বিডারদের মধ্যে সবার প্রথমে ছিল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড। তারা ৭৬৫ টাকা দর প্রস্তাব করে। সর্বোচ্চ দাম প্রস্তাব করলেও ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ শেয়ার ক্রয় করে মাত্র এক লট, তথা ২০টি শেয়ার। দ্বিতীয় শীর্ষ দরদাতা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক সিকিউরিটিজ দর হাঁকে ৬৪১ টাকা। এছাড়া আইডিএলসি ৪১১ টাকা, গ্রামীণ ওয়ান ৩২০ টাকা এবং সিটি ব্যাংক সিকিউরিটিজ দর হাঁকে ৩১৫ টাকা।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানির ২৫২ টাকার শেয়ারে কীভাবে ৭৬৫ টাকা দাম প্রস্তাব করে, তা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাও দ্বিধান্বিত। তাই ওয়ালটনের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) বিডিংয়ের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল, তা জানতে চেয়েছে কমিশন। নিলামে কোনো উপযুক্ত বিনিয়োগকারী কমিশনের আইন মোতাবেক বিডিং করেছে কি না, তা খোঁজা হচ্ছে। পেছনের গল্পের ইতিহাস খুঁজতে যারা অতিমূল্যায়িত করে বা নীতিমালা ভেঙে বেশি দামে নিলামে অংশ নিয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘ব্যাখ্যা তলব করা হবে’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম শেয়ার বিজকে জানান, ‘কোনো কোম্পানি বাজারে আসার আগে দাম কেমন হবে, সে ব্যাপারে কমিশনের নিজস্ব একটা মডেল আছে। ওয়ালটনের শেয়ারে যারা টপ বিডার ছিল, তারা কোন মডেল অনুসরণ করে দাম প্রস্তাব করেছে তা জানতে চেয়েছি।’ তাদের উত্তর পাওয়ার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ওয়ালটন বাজারে আসে আগস্টের শেষের দিকে। এরই মধ্যে পুঁজিবাজারের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। পুঁজিবাজারে আসার দুই দিনের মাথায় দাম বেড়ে যায় দ্বিগুণেরও বেশি। ২৫২ টাকায় বাজারে আসা এই কোম্পানির দাম এক সপ্তাহ পরই এক হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর পরই শুরু হয় সমালোচনা। এই কোম্পানি বাজারে আসার আগেই বিতর্ক তৈরি করে তাদের বিগত বছরের লাভের অঙ্ক নিয়ে। ওয়ালটনের দাম এর পর থেকে কমতে শুরু করে। গতকালও ২৬ টাকা কমে শেয়ারের দাম অবস্থান করছে ৭৬৫ টাকায়। এই কোম্পানির বাজারমূল্য এখন ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া কোম্পানিটি শেয়ারও ছেড়েছে এক শতাংশের কম।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানির শেয়ারের প্রান্তসীমা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কিছু কোম্পানির শেয়ারের প্রান্তসীমা নির্ধারণে নিলাম বা বিডিংয়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দর অতিমূল্যায়িত করে সেই কোম্পানির ঘনিষ্ঠ কিছু কোম্পানির প্রতিনিধি। অতীতে অনেক কোম্পানির শেয়ারের প্রান্তসীমা নির্ধারণে অতিমূল্যায়নের অভিযোগ ছিল। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সে সময়ে বিশেষ গুরুত্ব না দিলেও এখন বেশ নড়েচড়ে বসেছে। তাই কোম্পানিগুলোকে নোটিস পাঠাচ্ছে বিএসইসি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন জানায়, বিডিংয়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত বিনিয়োগকারী কমিশনের আইন অনুযায়ী বিডিং না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশন থেকে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে সেই দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা হয়।

তাহলে কি অতিমূল্যায়িত হওয়া কোম্পানি ওয়ালটন এবার ফেঁসে যাচ্ছেÑএমন প্রশ্ন এখন অনেকের। অতিমূল্যায়ন বা কারসাজি করা প্রতিষ্ঠান কি শাস্তি পেতে পারে? নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিএসইসি জানায়।

অতিমূল্যায়নের ইস্যুতে সেসব প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ার লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন কি শাস্তির আওতায় আসছে? কী শাস্তি হবেÑঅর্থদণ্ড না অন্যকিছু। এমন অনেক প্রশ্ন বুধবার বিকালে অনেক বিনিয়োগকারী করেন। তবে তারা শুধু অর্থদণ্ডের শাস্তিকে মানতে চান না।

এদিকে গত ৫ অক্টোবর ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ন্যূনতম শেয়ার ছাড়া এবং অতিমূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, ওয়ালটন এত কম শেয়ার ছেড়ে কীভাবে বাজারে আসার অনুমোদন পেল। ওয়ালটনের মাত্র এক শতাংশ শেয়ার বাজারে, বাকি ৯৯ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে, যে কারণে ওয়ালটন হঠাৎ করে পুঁজিবাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার মূলধনের কোম্পানি। এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে কি না আমি জানি না, কিন্তু এটা একটা ভুল বার্তা দিচ্ছে।

প্রযুক্তি খাতের দেশীয় কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা তুলেছে। নিলামে অংশগ্রহণকারীরা ওয়ালটনের শেয়ার পান ৩১৫ টাকায় আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ২৫২ টাকায়। ২৩ সেপ্টেম্বর লেনদেন শুরু হওয়া সেই শেয়ারপ্রতি মূল্য এখন আকাশচুম্বী।

সালমান এফ রহমানের প্রশ্নের উত্তরে বিএসইসির অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছিলেন, ‘আমি যোগদান করার আগেই ওয়ালটনের বিডিংসহ সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের যতটুকু করণীয় ছিল ততটুকু আমরা করতে পেরেছি। আমরা শুধু ২০ শতাংশ কম দামে এই শেয়ার বিনিয়োগকারীদের দিয়েছি।’ যদিও ছোটখাটো ভুলের কথা বলেন তিনি। এখন হয়তো সেই ভুল সংশোধনের দিকে হাঁটছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০