শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটে নতুন বছরে ঢিমেতালে লেনদেন হচ্ছে। ২০২৪ সালের প্রথম দিন থেকে সূচক কমছে। একই ধারা দেখা গেল গত বুধবারও। শেয়ারদর কমছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। এ নিয়ে নতুন বছরের দুই কার্যদিবসে পতন হলো ওয়াল স্ট্রিটে। নতুন বছর উপলক্ষে প্রথম কার্যদিবস সোমবার বাজার বন্ধ ছিল। খবর: এপি।
বুধবার দুপুরের পর এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। তবে এখনও ওয়াল স্ট্রিটের এই প্রধান সূচক ২ শতাংশ ঊর্ধ্বগামী, যা ঠিক দুই বছর আগের সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ সূচক ১১৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায় নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায়। নাসডাক কম্পোজিট সূচক কমে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
গত বছর ওয়াল স্ট্রিটে সূচকের উত্থানে অবদান রাখে বেশ কয়েকটি অতিকায় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। চলতি বছরেও এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য টেসলা। বুধবার টেসলার শেয়ারদর ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমলেও, তা গত বছরের উত্থান থেকে প্রায় অর্ধেক কম। গত বছরের শেষ কার্যদিবসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। অর্থাৎ বুধবার সূচক কমলেও তাতে পতন হয়নি।
টেসলা এবং আরও ছয়টি মহীরুহ প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে ‘ম্যাগনিফিসেন্ট ৭’ নামে পরিচিত। ২০২৩ সালে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়াল স্ট্রিটে সূচকের উত্থানে ভ‚মিকা রাখে। এপির খবরে বলা হয়েছে, এখন দেখার বিষয় এসব প্রতিষ্ঠান টানা ৯ সপ্তাহ ধরে পুঁজিবাজারের ঊর্ধ্বমুখী ধারা ধরে রাখতে সক্ষম হয় কি না। বিশ্লেষকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নীতি সুদহার কয়েকবার কমিয়েছে। তাদের আশা, দেশটির অর্থনীতি মন্দা এড়িয়ে যেতে পারবে। এমনকি ২০০১ সালের পর নীতি সুদহার সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকলেও মন্দার আঁচ লাগবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ সম্প্রতি ৩৪ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ায় ঋণসীমা ও কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় নিয়ে দেশটি আবার সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে ধারণা অর্থনীতিবিদদের।
২০২৩ সালে ফেডারেল রিজার্ভ আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবারগুলো চাপে পড়ে। নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির হার কমে। বন্ধকি ঋণের সুদ গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ শতকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে যায়। তবে ফেড নীতি সুদহার বৃদ্ধির শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে এমন ইঙ্গিত দেয়ার পর গত বছরের শেষ প্রান্তিকে দেশটিতে ব্যাংকঋণের সুদ কমেছে এবং সামগ্রিকভাবে আর্থিক পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার বিকালে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের হার ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ থেকে কমে ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরের পর সরকারি বন্ডের হার ৫ শতাংশ কমেছে। তবে এতে পুঁজিবাজারের লেনদেনে চাপ বৃদ্ধি পায়।
এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত নভেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে ৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন বা ৮৮ লাখ চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে, যা এর আগের মাসের তুলনায় কম এবং ২০২১ সালের পর সর্বনি¤œ। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বরে শ্রমিকদের চাকরি ছাড়ার হার তুলনামূলক কম ছিল। এ প্রসঙ্গে হাই ফ্রিকোয়েন্সি ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ রুবিলা ফারুকি বলেন, এই তথ্য নীতিনির্ধারকদের জন্য সুখবর বয়ে আনবে।
ওদিকে ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্টের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশার তুলনায় উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ইউরোপ ও এশিয়ার প্রধান পুঁজিবাজারগুলোয়ও সূচকের পতন হয়েছে। ফ্রান্সে সিএসি ৪০ সূচক কমেছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক কমেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
তবে পতনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে সাংহাই কম্পোজিট সূচক। এই সূচকে উত্থান হয়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।