ওয়াশ কার্যক্রমে পরিবার প্রতিবার্ষিক ব্যয় ১১৫৭৪ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পানি, স্যানিটেশন, হাইজিন বা স্বাস্থ্যবিধি তিনটির সমন্বয় হচ্ছে ওয়াশ। একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য দিন দিন এই খরচগুলো বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালের ওয়াশ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বছরে একজন মানুষের পানি স্যানিটেশন হাইজিনে খরচ হচ্ছে তিন হাজার ৪৯১ টাকা। গড়ে একটি পরিবারের খরচ হচ্ছে ১১ হাজার ৫৭৪ টাকা, যা ওই পরিবারের মোট আয়ের দশমিক শতাংশ, ছাড়া বছরে জিডিপির দশমিক ১৮ শতাংশ। গতকাল রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রেন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস, ২০২০শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, পরিসংখ্যান তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব . শাহনাজ আরেফিনসহ সংশ্লিষ্টরা।

ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস প্রকাশনায় দেখা যায়, একজন মানুষের বছরে স্বাস্থ্যবিধি বা হাইজিনে খরচ হয় দুই হাজার ৯৩ টাকা, পানির পেছনে খরচ হয় ৫০০ টাকা এবং স্যানিটেশনে খরচ হয় ৮৯৮ টাকা, যা খুবই বেশি। মোট ওয়াশ খরচের প্রায় ৬০ শতাংশ স্বাস্থ্যবিধিতে ২৬ শতাংশ স্যানিটেশনে ব্যয় হয়। মোট ওয়াশ খরচের ১৪ শতাংশ ব্যয় হয় পানির জন্য।

প্রকাশনায় দেখা যায়, বছরে গড়ে প্রতিটি পরিবার পানি বাবদ এক হাজার ৫০২ টাকা, স্যানিটেশন বাবদ এক হাজার ৯৮৫ টাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি বাবদ আট হাজার ৮৭ টাকা খরচ করে। পরিবার প্রতি ওয়াশ বাবদ গড় খরচ ১১ হাজার ৫৭৪ টাকা, যা তাদের বার্ষিক পরিবারিক আয়ের দশমিক শতাংশ। আয়ের পরিমাণ অনুসারে পারিবারিক ওয়াশ ব্যয়ের বিভাজন থেকে দেখা যায়, শহরাঞ্চল গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রে দরিদ্র এবং দরিদ্রতম আয়ের পরিবারগুলো তাদের আয়ের বড় অংশ ওয়াশে ব্যয় করে।

বাংলাদেশে জনসংখ্যার দশমিক শতাংশ নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ খাবার পানি সংগ্রহের জন্য নলকূপ ব্যবহার করে। আনুমানিক ১০ শতাংশ জনসংখ্যার ট্যাপ বা পাইপযুক্ত পানীয় জলে সুবিধা রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ শহরে বসবাস করেন। শহরে বসবাসকারীদের বেশিরভাগ বড় নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানির ওপর নির্ভরশীল। ২০২০ সালে শহর এলাকায় বসবাসকারীদের ওয়াশের ব্যয় ছিল দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা। একই সময়ে গ্রামীণ জনসংখ্যা খাতে চার হাজার ৯৭০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যেখানে ব্যয়ের ৭৯ শতাংশ ব্যবহƒ হয়েছে হস্ত বা মোটরচালিত পাম্প দিয়ে পানি তোলার জন্য।

এদিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯৯ শতাংশ ফ্ল্যাশ/পৌর ফ্ল্যাশ বা পিট ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। পিট ল্যাট্রিন ব্যবহারকারী এবং ফ্ল্যাশ/পৌর ফ্ল্যাশ ব্যবহারকারীর হার প্রায় একই, যা যথাক্রমে ৪৮ শতাংশ এবং ৫১ শতাংশ। ২০২০ সালে, মোট ওয়াশ বায়ের আনুমানিক ২৬ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা স্যানিটেশন পরিষেবায় ব্যয় করা হয়েছে, যার মধ্যে সাত হাজার ৯৮০ কোটি টাকা গ্রামীণ এলাকায় এবং পাঁচ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা শহর এলাকায় ব্যয় করা হয়েছে।

হাত ধোয়া এবং মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত ব্যয় মোট স্বাস্থ্যবিধি ব্যয়ের ৯৬ শতাংশ। ২০২০ সালে পরিচ্ছন্নতা পরিষেবার জন্য ব্যয় ছিল ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা, এরপর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির জন্য ১৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

বিভাগীয় পর্যায়ে ওয়াশ ব্যয়ের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০ সালে ওয়াশ খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে ঢাকা বিভাগে (২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা), এরপরে চট্টগ্রামে (১৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা) মোট ওয়াশ ব্যয়ের ১২ শতাংশ রাজশাহী বিভাগ ব্যয় করে থাকে। খুলনা, ময়মনসিংহ এবং রংপুরের ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় একই মাত্রার, যা কি না মোট ওয়াশ ব্যায়ের দশমিক শতাংশ থেকে আট শতাংশের মধ্যে। ওয়াশ ব্যয়ের সর্বনিম্ন অংশ সিলেট এবং বরিশাল বিভাগে পরিলক্ষিত হয়, যথাক্রমে দশমিক শতাংশ এবং দশমিক শতাংশ।

২০২০ সালে বাংলাদেশের জন্য মাথাপিছু ওয়াশ ব্যয় ছিল হাজার ৪৯১ টাকা, যেখানে ঢাকার জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে জনপ্রতি হাজার ২৯৫ টাকা। এরপর চট্টগ্রাম তিন হাজার ৯৯১ টাকা।

জানা গেছে, ২০২০ সালে মোট ওয়াশ ব্যয়ের প্রায় ১৬ শতাংশ কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক বা স্থানীয় সরকারের তহবিল দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছে। সরকারের মোট হাজার ৬৫০ কোটি টাকার মধ্যে, কেন্দ্রীয় সরকার আট হাজার ৩০ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকার জোগান দেয়। ২০২০ সালে ওয়াশসম্পর্কিত প্রকল্পগুলোয় দ্বিপক্ষীয় সংস্থাগুলোর সরাসরি ব্যয় ছিল ১৩০ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস হলো একটি স্বীকৃত পদ্ধতি, যা জাতীয় পর্যায়ে পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যাবিধি (ওয়াশ) সম্পর্কিত সরকারি বেসরকারি ব্যয় ট্র্যাকিং করতে ব্যবহƒ হয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য হলো, ওয়াশ পরিষেবাগুলোয় করা বিনিয়োগ খরচের একটি বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরা এবং এসব পরিষেবা উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তথ্যগুলো ব্যবহার করা। ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টসের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য সরকার এবং অন্য অংশীজনদের বিনিয়োগের ব্যবধান চিহ্নিতকরণ, অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যয় খাত নির্ধারণ এবং টেকসই ওয়াশ পরিষেবা নিশ্চিত করতে কার্যকরভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে সম্পদ বরাদ্দ নিশ্চিতে সহায়তা করতে পারে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০