নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদেরও ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, তাকসিম এ খানের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর- ২৬৯৬৫৩৬০৯০৩৪৪, পাসপোর্ট নম্বর- ই০০২৩২৮৩, ওসি২২৬০৩৫২, ওসি৭০৭২৬২৬। এবং পরিবারের সদস্যদের বর্তমানে ও আগে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য ও দলিলাদি এবং শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী, ২০১৫) এর ২৩ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকসিম এ খানের ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়েছে।
এর আগে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান গত ১৩ বছর ধরে বেতন-ভাতা বাবদ কত টাকা নিয়েছেন, সেই হিসাব দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৭ আগস্ট এ আদেশ দেয়।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে তিনি এখনও বহাল তবিয়তে আছেন। বিতর্কিত তাকসিম এ খানের পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো, ঠিকাদার নিয়োগে সিন্ডিকেট, ঘুষ লেনদেন, পদ সৃষ্টি করে পছন্দের লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, অপছন্দেও লোককে ওএসডি করাসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াসার প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় না। নানা প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের নকশা ও বিবরণ অনুযায়ী কাজ করা হয় না। প্রকল্পে পরামর্শক ও ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন কিছু শর্ত আরোপ করা হয়, যাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ঠিকাদার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন। এছাড়া ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট পদ্ধতি ও রাজনৈতিক পরিচয় এবং কাজ পাওয়ার বিনিময়ে ঘুষ লেনদেন বর্তমানে একটি প্রচলিত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদন বলছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়।
সম্প্রতি অভিযোগ আনা হয়, ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা ছয়টি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের প্রত্যক্ষ মদতে ও নির্দেশে অপর আসামিরা টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
তাকসিম এ খানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা বিষয়ে আদালত জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে যে ধারার (দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ৪৭৭-এ) অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে, তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শিডিউলভুক্ত অপরাধ। এ বিষয়ে মামলা দায়ের, তদন্ত কিংবা অপরাধ আমলে নেয়ার এখতিয়ার শুধু দুদকের। পরে মামলাটি ফেরত দেয়া হয়।