নিজস্ব প্রতিবেদক: ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বশীর আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৪৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) সংস্থাটির উপপরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বশীর আহমেদ অবৈধ উপায়ে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তিনি ১ কোটি ৭৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪১ কোটি ৮৭ লাখ ৯১ হাজার ৬৫৫ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সম্পদ বিবরণীতে তিনি ৫২ কোটি ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। অনুসন্ধানকালে, বশির আহমেদের নামে ৯২টি দলিলমূলে জমি ক্রয়, জমিসহ বাড়ি ক্রয়, ফ্ল্যাট ক্রয় এবং বাড়ি নির্মাণে ঘোষিত ৪৬ কোটি ৩১ লাখ ৬২ হাজার ৬৫০ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও যাচাইকালে অতিরিক্ত প্রাপ্ত এক কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদসহ মোট ৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ২২ হাজার ৫৬০ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়।
স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র, গাড়ি, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং (প্রা.) লিমিটেড, দি ইম্পেরো প্রপার্টিজ লি., ওয়েস্টার্ন ড্রেজার্স (প্রা.) লি. ও ওয়েস্টার্ন ব্লক মেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা.) লি. কোম্পানির শেয়ার, বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর এবং ব্যাংক স্থিতি বাবদ ছয় কোটি ২৭ লাখ ২৩ হাজার ২৮৬ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৫৪ কোটি ছয় লাখ ৪৫ হাজার ৮৪৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথি অনুযায়ী তার পারিবারিক ব্যয় পাওয়া যায় দুই কোটি ৩১ লাখ ১২ হাজার ১৫৭ টাকা। পারিবারিক ব্যয়সহ মোট ৫৬ কোটি ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার তিন টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক।
এসব সম্পদ অর্জনের বিপরীতে ২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ করবর্ষ পর্যন্ত সম্মানি বাবদ আয়, ব্যবসা ও পেশা থেকে আয়, অন্যান্য উৎস থেকে আয়, গৃহ সম্পত্তি থেকে আয় এবং ১৯ বিবিধ ধারায় ঘোষিত আয়সহ পাঁচ কোটি ২৩ লাখ আট হাজার ২৩০ টাকার আয় এবং ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ দায় ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকাসহ মোট পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ ৮৮ হাজার ২৩০ টাকার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায়।
অসাধু উপায়ে অর্জিত ও তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৫১ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭৭৩ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে বশির আহমেদ ভোগ দখলে রেখেছেন, যা ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়া সম্পদ বিবরণীতে তিনি এক কোটি ৭৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ঘোষণা দিয়ে তিনি ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’-এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৫১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৩ টাকা নিট সম্পদ উল্লেখ করে তিনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে বিগত আয় বছরের শেষ তারিখের নিট সম্পদ ২৯ কোটি ১০ লাখ ১৫ হাজার ২১৩ টাকা বলে উল্লেখ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। অর্থাৎ তিনি ২২ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩০০ টাকা নিট সম্পদ কম দেখিয়েছেন, যা সন্দেহজনক। তদন্তকালে সেটিও খতিয়ে দেখা হবে। ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করা হয়। সম্পদ বিবরণী দাখিলের পর দুদক অনুসন্ধান শুরু করে।
প্রসঙ্গত, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং (প্রা.) লিমিটেড ১৯৯৮ সালে ব্যবসা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে অবকাঠামো খাতে এবং পরে তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও বিনিয়োগ করে। এছাড়া তাদের পাটজাত পণ্যের ব্যবসাও রয়েছে। ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কার্যালয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে।