Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 12:16 am

ওলকচু রপ্তানিতে সম্ভাবনা বাড়ছে

মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম: ওলকচু বা কোনজাক জাদুকরী ফাইবারসমৃদ্ধ (আঁশসমৃদ্ধ) খাবার হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এ ওলকচু (ড্রাই কোনজাক) রপ্তানি হচ্ছে জাপানে। ডায়াবেটিস, কোলন ক্যানসার, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অনেক রোগ নিরাময়ে এটি ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। পার্বত্য ও পাহাড়ি অঞ্চলসহ দেশের প্রায় সব জেলায় এ পণ্যটি উৎপাদিত হয়। এর ফলে রপ্তানি বাণিজ্যে রয়েছে এর ব্যাপক সম্ভাবনা। এ ব্যাপারে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট মহলের কার্যকর পদক্ষেপ।

জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের প্লান্ট কোয়ারেন্টিন স্টেশনের মাধ্যমে ‘কোনজাক’ রপ্তানি শুরু হয়েছে। জাপানের ওসাকা ও ইয়োকোহামায় ‘দাই ইচি ইন্টারন্যাশনাল’ নামে ঢাকার একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রতি কেজি ড্রাই কোনজাক তিন মার্কিন ডলার দরে রপ্তানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত ২০১৮ সালে এক মেট্রিক টন এবং চলতি বছরে আরও এক মেট্রিক টনসহ মোট দুই মেট্রিক টন ওলকচু জাপানে রপ্তানি করে। এতে মোট ছয় হাজার মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এটাকে বিশাল অর্জন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় সহজলভ্য হওয়া সত্ত্বেও এখনও ওলকচু সাধারণ মানুষের কাছে অবহেলিত। পুষ্টিগুণ ও রপ্তানির তথ্য সাধারণ মানুষ না জানায় ওলকচু চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি। অথচ বাংলাদেশ থেকে ওলকচু চাষ করে রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান সরকার রপ্তানির জন্য নতুন নতুন কৃষিপণ্য ও বাজার সৃষ্টির কথা বলে আসছে। ড্রাই কোনজাক বা ওলকচুজাতীয় কৃষিপণ্য ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বে রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে কৃষিজাত এ পণ্য চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাত করে একদিকে দেশের বাজারে বিক্রি করা যাবে, অপরদিকে জাপানসহ উন্নত বিশ্বে রপ্তানির এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হতে পারে।

আর জাপানিদের কাছে কোনজাক নুডলস হিসেবে বেশি পছন্দের। বর্তমানে জাপানে কোনজাক পণ্য বিভিন্ন কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়ার কিছু দেশেও এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। কোনজাক ফাইবারের স্বাস্থ্য গুণাগুণের জন্য এশিয়াসহ পশ্চিমা বিশ্বে এর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।

সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের প্লান্ট কোয়ারেন্টিন স্টেশনের কৃষিবিদ (কোয়ারেন্টিন প্যাথোলজিস্ট) সৈয়দ মনিরুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নতুন একটা জিনিস রপ্তানি হচ্ছে জানতে পারলে এটি রপ্তানিতে মানুষ উৎসাহ পাবে। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ উন্নত বিশ্বে ওলকচুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশের জন্য নতুন হলেও অন্যান্য দেশ থেকে এটি রপ্তানি হচ্ছে। ওলকচু উৎপাদনে যদি আমরা আগ্রহী হই তাহলে বেশি উৎপাদন হলে বেশি রপ্তানি করতে পারব। তাতে আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে।’

সৈয়দ মনিরুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশেও যদি ওলকচু দিয়ে স্যুপসহ বিভিন্ন পণ্য বানানো যায়, তাহলে বাজারে চাহিদা সৃষ্টি হবে। স্বাস্থ্যসচেতন অনেক মানুষ এটি খেতে আগ্রহী হবে। আমরা মন্ত্রণালয়ে এটি নিয়ে আলাপ করেছি। এটি নিয়ে কাজ করার জন্য মন্ত্রণালয় খুবই উৎসাহ দিয়েছে আমাদের। বাংলাদেশে যেহেতু ওলকচু উৎপাদন করা হয়, সেক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে এর উৎপাদন আরও বাড়বে। দেশের মানুষ খেতে পারবে, পাশাপাশি রপ্তানিও করা যাবে।’

রপ্তানিকারকরা জানান, কোনজাক গাছ সাধারণত এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে, যেমনÑচীন, জাপান, কোরিয়া, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় উৎপন্ন হয়। জাপানিরা একে ‘কোনানিয়াকো’ নামে চেনে। কোনজাক ফাইবার গেলাটিন উপাদান হিসেবে কনসেনট্রেটিং এজেন্ট ও চাইনিজ ওষুধের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে কোনজাক খাদ্য উপাদান হিসাবে ও খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ব্যবহার করা হয়।

আর আফ্রিকায় বসবাসকারী আদিবাসীরা ফাইবারসমৃদ্ধ উদ্ভিদজাত খাদ্যই বেশি পরিমাণে আহার করত বলে তারা বিভিন্ন ধরনের কোলন ডি-জনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকত। বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বও তাদের খাদ্যাভাসে ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করছে। ফলে খাদ্যাভাস পরিবর্তনের জন্য গ্যাস্ট্রো-ইন্টেসটিনাল রোগের প্রকোপও অনেক কমে গেছে।

ওয়েব গউ (ডবন গউ) তথ্যানুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ও বাচ্চার প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ গ্রাম ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। তারা বলেন, কোনজাক-জাতীয় খাদ্য শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের জোগান দেয়, যেমনÑপানি, প্রোটিন, কার্বহাইড্রেট, লিপিড, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, কপার, জিংক, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-বি১, ভিটামিন-বি২, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-বি১২, ভিটামিন-সি, প্যান্টোথিকেট, ফ্যাটি এসিড, ফলিক এসিড ও খাদ্যোপযোগী আঁশ (ডায়াটরি ফাইবার)।