এমএ শাহরিয়ার, বান্দরবান : বান্দরবানে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন রোগীরা। হঠাৎ করেই খুচরা ওষুধ বিক্রেতারা প্রতিপাতা ওষুধে দাম বাড়িয়েছেন ১০ থেকে ৭০ টাকা। এক্ষেত্রে বিক্রেতা দামে কিছুটা কম রাখলে সমিতির নেতারা তাকে জরিমানা করছেন। মূলত ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো বিভিন্ন ফার্মাসির বিক্রি বাড়াতে এ ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির মুষ্টিমেয় নেতা। এসব অভিযোগ এনেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ব্যবসায়ী।
কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি ও ক্রেতাদের সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান পৌরসভাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে ৬০টি ফার্মাসি রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ-ছয়টি ফার্মাসিতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পণ্যের গায়ের দামের চেয়ে ছাড় দিয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করার কৌশল নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ প্রতিযোগিতার বাজারে বান্দরবানের ছোট ছোট নতুন করে গজানো ফার্মাসিগুলোর বিক্রি বাড়াতে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সিন্ডিকেট চক্র। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার ছত্রছায়ায় সমিতির মুষ্টিমেয় দায়িত্বশীল নেতার হঠকারিতামূলক এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অনেক ব্যবসায়ীও।
ক্রেতা জ্ঞানতোষ দাস ও উজ্জ্বল দাস অভিযোগ করে বলেন, হঠাৎ করেই ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন দোকানদাররা। অন্ধকার গলির ফার্মাসিগুলোর বিক্রি বাড়াতে এ পথ বেছে নিয়েছে সমিতি। আগে এলআরজির ওষুধ টারব্যাক এক পাতা বিক্রি হতো ৪৫০ টাকায়। অথচ এখন নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। সারজেল বিক্রি হতো ৬৫ টাকায়। কিন্তু নিচ্ছি ৭০ টাকা। অথচ পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় এবং চট্টগ্রাম শহরে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। ঘরে ঘরে এখন রোগী। বেশিরভাগ পরিবারেই প্রতিদিন ওষুধ কিনতে হয়। কিন্তু জরিমানা গোনার ভয়ে এখন আর কোনো ফার্মাসি মালিক ওষুধের দাম কম রাখছেন না। ফলে ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আবার যাচাই করে ওষুধ কেনাার সুযোগও থাকছে না। ওষুধ ব্যবসায় এমন মানবেতর চর্চার বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি রাখেন এ দুই ক্রেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ফার্মাসি ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা ওষুধের ব্যবসা করছি। এমআরপি (মোড়কের গায়ের দাম) দাম থেকে ছাড় দিয়েই এতদিন ধরে ওষুধ বিক্রি করে আসছি। মুনাফা তখনও হতো, এখন এমআরপি দামে বিক্রি করেও মুনাফা হচ্ছে, কিন্তু ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতিযোগিতার বাজারে ছাড়ের প্রবণতা থাকায় ক্রেতারা সুবিধা পান। কিন্তু সমিতির মুষ্টিমেয় নেতার হঠকারিতামূলক সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
অভিযোগ অস্বীকার করে বান্দরবানের কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সহসভাপতি শিমুল দাস বলেন, প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকা এমআরপি দামে ওষুধ বিক্রির জন্য ফার্মাসি মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ক্রেতাদের ছাড় দিলে জরিমানা করা হচ্ছে কথাটি সঠিক নয়। বড় দোকানগুলো ছাড় দেওয়ায় মুষ্টিমেয় কয়েকটি ফার্মাসি ছাড়া অন্যরা লাভবান হতে পারছে না। ক্রেতাদের জিম্মি করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওষুধ ব্যবসায় সীমিত মুনাফা। ব্যাঙের ছাতার মতো ফার্মাসি হচ্ছে এবং লাভ হচ্ছে বেশি, এটি ভুল ধারণা। কেন্দ ীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, ভেজাল ওষুধ বিক্রি বন্ধে এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমতা আনতে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোনো ফার্মাসি মালিক যদি এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন, তাহলে সমিতির কমিটি ভেঙে দেব।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন অংসুই প্রু বলেন, ভেজাল ও ওষুধ ফার্মাসিগুলোর অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ড্রাগিস্ট সংস্থা কাজ করে। ভেজাল ওষুধ বিক্রি, লাইসেন্স এবং দাম নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি কমিটিও রয়েছে। কমিটিতে সিভিল সার্জন অফিসের একজন প্রতিনিধিও রয়েছেন। ওষুধের দাম বেশি নেওয়াসহ অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, হঠাৎ করে ওষুধের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।