Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:43 pm

ওসির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা স্ত্রীর নামে সম্পদ গোপন

নিজস্ব প্রতিবেদক;স্ত্রীর কোনো বৈধ আয়ের উৎস নেই, তারপরও তিনি কিনেছেন ৪৫ লাখ টাকার এফডিআর। আবার সেই স্ত্রীর কাছ থেকেই ৮৭ লাখ টাকা ধারও নিয়েছেন স্বামী। আয়কর নথিতে ধারের টাকা দেখিয়েছেন। নিজের নাম পাল্টে এমএম এইচ কনক নামে কিনেছেন জমি। তাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৩২টি অ্যাকাউন্টও পাওয়া গেছে। মোট পৌনে তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে তাদের। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এই ঘটনায় সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার সাবেক ওসি মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রী জেসমিন সুলতানার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-২) দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেছেন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, তারা অবৈধ উপায়ে আয় করা সম্পদ বৈধ করার অপচেষ্টা করেছেন। তাদের আরও সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে, তদন্ত পর্যায়ে সেটি আমলে আনা হবে। দুই আসামি ও তাদের সন্তানদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৩২টি অ্যাকাউন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে রয়েছেÑমেঘনা ব্যাংকে স্ত্রীর নামে ১১টি, স্বামীর নামে দুটি; ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের আশুলিয়া শাখায় স্বামীর নামে একটি, একই ব্যাংকের ঢাকার শ্যামলী শাখায় ছেলের নামে একটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নড়াইলের লোহাগড়া শাখায় স্ত্রীর নামে একটি, ইস্টার্ন ব্যাংকে দুটি, ওয়ান ব্যাংকে মোট সাতটি, সিটি ব্যাংকের শ্যামলী শাখায় ছেলের নামে একটি, জনতা ব্যাংকে স্ত্রীর নামে একটি, আইএফআইসির এলিফ্যান্ট রোড শাখায় দুটি, প্রাইম ব্যাংকে স্ত্রীর নামে একটি ও স্বামীর নামে একটি এবং সোনালী ব্যাংক ঢাকার ইপিজেড শাখায় একটি।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রী জেসমিন সুলতানার নামে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার দিয়াখালীর সাড়ে ১০ শতাংশ জমির ওপর (জেবা ম্যানশন নামীয় পাঁচ ইউনিট) ৯ তলা বাড়ি এবং আশুলিয়ায় চারতলা বাড়িসহ ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ জমি রয়েছে, যার বিপরীতে এক কোটি ২০ লাখ টাকা এবং তার স্ত্রী এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ওই বাড়ি দুটি নির্মাণ করেছেন। ওই বাড়ি নির্মাণের সময় তিনি তার স্ত্রীর কাছ থেকে ৮৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। অথচ তার স্ত্রীর আয়ের কোনো বৈধ উৎস বা ব্যবসা-বাণিজ্যও নেই।

অনুসন্ধানকালে মোফাজ্জল হোসেনের নামে পাঁচ কোটি ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৬ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তাদের যৌথ নামের দুটি বাড়ি নির্মাণের পর ২০২১-২২ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন, যেখানে অতীত জীবনের সঞ্চয় এক কোটি ৩২ লাখ ২৮ হাজার ১৮৪ টাকা, ব্যাংকঋণ এক কোটি ২০ লাখ টাকা ও ফ্ল্যাট বন্ধক ৬০ লাখ টাকাসহ ৪ কোটি ৩৮ লাখ ২৭ হাজার ৯৫৭ আয়ের উৎস প্রদর্শন করেছেন। এর মধ্যে ফ্ল্যাট বন্ধকের ৬০ লাখ টাকার আয়ের উৎসের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। মোট তিন কোটি ৭৮ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৫ টাকার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায়। মোট এক কোটি ৩২ লাখ ৪১ হাজার ১৭১ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়, যা দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

অনুসন্ধানকালে জেসমিন সুলতানার নামে দুই কোটি দুই লাখ ৮০ হাজার ৯৭৯ টাকার স্থাবর ও এক কোটি ২৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্যসহ মোট তিন কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ৯৭৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে ঋণ, সঞ্চয় ও বাড়িভাড়াসহ দুই কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬০৬ টাকার আয়ের উৎস পাওয়া যায়। তবে এক কোটি ৩৮ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৫ টাকা বাদে অন্য কোনো আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, জেসমিন সুলতানা গৃহিণী। তার নামে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। তার আয়ের কোনো বৈধ উৎসও নেই। স্বামী মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ওসি হিসেবে পুলিশে কর্মরত থাকাকালে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দ্বারাই সম্পদ অর্জিত হয়েছে, যে কারণে মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭(১) এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন ১৯৮৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর এসআই হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে তিনি পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। তার প্রথম স্ত্রী রিতা বেগমের সঙ্গে ২০০৩ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তিনি দ্বিতীয়বার ২০০৬ সালে জেসমিন সুলতানাকে বিয়ে করেন। ২০২১ সালে মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন চাকরি থেকে অবসরে গেছেন।

দুদকের মামলার এজাহারে আনা অভিযোগের বিষয়ে মুন্সি মোফাজ্জল হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি কিছু জানি না।’ অনুসন্ধানকালে দুদক তো আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, আপনি আয়কর নথিসহ বিভিন্ন তথ্যও দিয়েছেন, তাহলে এখন কেন বলছেন, আপনি কিছু জানেন না। তখন তিনি বলেন, ‘আমার কোনো মন্তব্য নেই।’